গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহতদের ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজের’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে আদালতে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান তিনি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, “নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ”। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলির কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদের জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান চলাকালে শহিদদের মরদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেয়া হয়নি। অনেককে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেলেও অনেকের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা যাওয়ার কথাটি লিখতে দেয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট বা জ্বরে মারা গেছে এমন কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়াও আন্দোলনে শহিদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে এমন খবর জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা-আক্রমণও করেছে।
শুনানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, শহিদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই? আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহিদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়, বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে, কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল!’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার এমন নির্মমতার প্রমাণগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিকের পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতে হস্তান্তর করা হবে।
More Stories
বিগত সরকারের সময় অর্থনৈতিক তথ্য ছিল ‘গোঁজামিল নির্ভর’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল- তা...
আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না: জামায়াত আমির
আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি...
আপনি আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ নিয়ে এসেছেন, গুতেরেসকে প্রধান উপদেষ্টা
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অগ্রিম ঈদ নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার...
বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় গুতেরেসের উদ্বেগ
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।...
রোহিঙ্গারা যেন আগামী ঈদ রাখাইনে করতে পারে সে প্রচেষ্টা চলছে : প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়িতে গিয়ে...
এখনো লড়াই বাকি: মাহফুজ আলম
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে ইসলামবিদ্বেষকে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া...