যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
টিউলিপের পদত্যাগপত্রটি কালবেলা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল –
“প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি আপনি যে আস্থা প্রদর্শন করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্ত্রীদের মানদণ্ডবিষয়ক আপনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি আমার স্বপ্রণোদিত আবেদন দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং আমার বর্তমান ও অতীত আর্থিক এবং বাসস্থানসংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার সুযোগ দিয়েছেন।
আপনি অবগত আছেন, আমার অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করার পর, স্যার লরি নিশ্চিত করেছেন, আমি মন্ত্রিত্ববিধি ভঙ্গ করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার মালিকানাধীন বা বসবাসকৃত সম্পত্তি বা আমার কোনো সম্পদ বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আমার পারিবারিক সম্পর্ক সর্বজনবিদিত এবং যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হই, তখন আমি আমার সমস্ত সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের তথ্য সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপক পরামর্শের পর আমাকে আমার স্বার্থপত্রে উল্লেখ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আমার ফুফু বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশসংক্রান্ত বিষয় থেকে (আমার) বিরত থাকা উচিত, যাতে স্বার্থের সংঘাতের কোনো সন্দেহ না থাকে। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই, এসব বিষয়ে আমি সর্বদা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থেকেছি এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করেছি।
তবে এটি স্পষ্ট, অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে আমার ভূমিকা সরকারি কাজের জন্য একটি বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। আমার আনুগত্য সব সময় এই লেবার সরকার এবং তার জাতীয় পুনর্নবীকরণ ও রূপান্তরের কর্মসূচির প্রতি থাকবে। তাই আমি আমার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনার সরকারে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি পেছনে থেকে যে কোনোভাবে সরকারকে সমর্থন করতে থাকব।
শুভেচ্ছান্তে,
টিউলিপ সিদ্দিক এমপি”
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় দলের ভেতরে-বাইরে চাপে পড়েন তিনি।
গার্ডিয়ানের সূত্র বলছে, কিয়ার স্টারমার টিউলিপ সিদ্দিককে সমর্থন করছিলেন। অভিযোগ ওঠার পরও তিনি তাকে বরখাস্ত না করায় বিরোধী দলও সমালোচনামুখর হয়। এদিকে টিউলিপও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ রাজনীতিতে আলোড়ন তোলা এ ঘটনায় শেষমেশ কিয়ার স্টারমার সরাসরি টিউলিপের পক্ষ থেকে সরে আসেন। বাংলাদেশের সাথে শেখ পরিবারের সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টিউলিপকে আরও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন স্টারমার।
এদিকে পদত্যাগ করলেও টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি তার সব আর্থিক স্বার্থ এবং সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেন। তবুও বর্তমান পরিস্থিতি সরকারের জন্য বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিকের দখলে থাকা আরও দুটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। প্রথম ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীর।
খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তবে ওই ফ্ল্যাটের বিনিময়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি টিউলিপ সিদ্দিককে। বিনামূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য ওঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে পাওয়া ওই ফ্ল্যাট লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় যে ফ্ল্যাটের কথা বলা হচ্ছে তাতে টিউলিপ বসবাস করতেন। এটি তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূত্রে পাওয়া। তবে এই ফ্ল্যাটটি সরাসরি টিউলিপকে দেওয়া হয়নি। তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন মঈন গনি নামের একজন বাংলাদেশি আইনজীবী। তিনি হাসিনা সরকারের লোক বলে পরিচিত।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিভিন্ন দুর্নীতিতে টিউলিপের সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতাদের বিচার শুরু হলে এ নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
More Stories
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি: জাতিসংঘের প্রতিবেদন দায়বদ্ধতা ও বিচারকে ত্বরান্বিত করবে
বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই প্রতিবেদনে প্রমাণ পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের...
আ. লীগ সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নৃশংসতা চালিয়েছিল: জাতিসংঘ
জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সাবেক সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার...
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ হত্যা, ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু: জাতিসংঘ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে...
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ইলন মাস্ক, কী বললেন ট্রাম্প?
টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রচ্ছদে ইলন মাস্ককে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে দেখা নিয়ে মুখ খুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগে তিনি...
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ১৫ মাসের নজিরবিহীন হামলা ও বর্বরতার পর অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী...
মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে বাংলাদেশে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন: এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন
বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করেছে।...