বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে দুই হাজারের বেশি তরুণের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সামগ্রিকভাবে গত ১৫-১৬ বছরে প্রায় ২০ হাজার তরুণের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এরা। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তোমরা (তরুণরা) জেগে উঠেছো।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র কনভেনশনে এসব কথা বলেন তিনি।
খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাকে আমরা ঠিকমতো মূল্যায়ন করি না। আমি খুব আশঙ্কায় ছিলাম, এই মহীয়সী নেত্রী কি আবার দেখে যেতে পারবেন, তার দেশে আবার মুক্ত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে তিনি দেখে যেতে পারছেন দেশ আবার মুক্ত হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ছাত্ররা সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে কিন্তু এ আন্দোলনে কতজন রিকশা শ্রমিক প্রাণ দিয়েছে, আমরা তার সঠিক হিসাব রাখি না। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম অসুস্থ ছাত্রদের দেখতে। সেখানে গিয়ে দেখেছি প্রায় ৪০ ভাগ শ্রমিক, যারা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন এবং রিকশা চালান। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো প্রয়োজন। এ কথাগুলো এজন্য বলছি যে এবার লড়াইটা মাটি থেকে দাঁড়িয়ে করেছে। গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেছে কিন্তু ভয় পেয়ে পেছনে হাঁটেনি, এখানে বিজয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যখনই আমরা বুক পেতে দিয়েছি, রক্ত ঝরিয়েছি, তখনই আমাদের বিজয় এসেছে।
কোনো ষড়যন্ত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জন বৃথা যেতে দেয়া হবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তোমাদের প্রতি একটাই অনুরোধ যে আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে আছে… ওখান থেকে নতুন নতুন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তারা এক একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বকে দেখাতে চায় যে বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে, বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে।
ভারতের পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এখন এই ধরনের সমস্ত নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে– উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসলে তা না। কারা এগুলো করছে? কেন করছে? আমি এ কথাটা এজন্য বলছি যে এ আনন্দে আমাদের থাকার অবকাশ নাই যে, আমরা জিতে গেছি… সব হয়ে গেছে। আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়গ এখনো আছে এবং চারদিক থেকে তারা চেষ্টা করছে আবার অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এজন্য খুব সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কোনোরকম হঠকারিতা, কোনোরকম বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে। সেটাকে রুখে দিতে হবে, এটা হচ্ছে একটা বড় কাজ।
সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে কনভেনশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপি পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল, যুবদলের কামাল আনোয়ার আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
More Stories
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন— সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী...
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা...
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে যাবে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয়...
ছাত্রশক্তির নেত্রী জেদনীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলী...
