বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। এ সরকার এসেছে একটি সংকটময় মুহূর্তে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে। ফলে এ সরকারকে নির্বাচনের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। এজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে আর আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাটের বড়বাড়ি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর নেতিবাচক আলোচনার কারণে ফ্যাসিবাদের দোসররা নতুন করে মাথা উঁচু করছে। জাতির সামনে যে সংকট আছে তা সমাধানের একমাত্র পন্থা হচ্ছে ধৈর্য। প্রয়োজন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করা এবং একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্র করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। তারা হাজার হাজার মানুষকে গুম করে ও খুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না যার কারণে সরকার বিতর্কিত হয়। কারণ এ সরকারের প্রধানের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববরেণ্য একজন মানুষ। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজ যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যেন জাতি হাতছাড়া না করে। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমি এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। তবে নির্বাচিত সরকার এলে বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এজন্য দরকার নির্বাচন ও সংস্কার।
ফখরুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর রহমতে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়, ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করা হয়। আজ আমরা শপথ নিয়েছি, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আধিপত্যবাদকে রুখে দেব। এর জন্য প্রয়োজনে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা বারবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি কারণ, আমরা বিশ্বাস করি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার উদ্যোগ সফল হতে পারে না। এ ধরনের অংশগ্রহণ কেবল নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পুরো পরিবর্তন করে দেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়ে এসেছেন। রুদ্ধ-বদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেন। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটা নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেন এবং তারই প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘকাল সংগ্রাম করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। এখনো বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। রাজনীতিবিদরা শুধু ক্ষমতায় ফেরার আকাঙ্ক্ষাই করেন না, তারা বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার কবল থেকে মুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন, নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
More Stories
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন— সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী...
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা...
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে যাবে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয়...
ছাত্রশক্তির নেত্রী জেদনীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলী...
