জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বীরত্বকে স্মরণ করে লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, তরুণসমাজ যে সাহস করেছেন এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছে, এটাই আমাদের মূলধন। এটা ধরে রাখতে হবে। কিন্তু এটাকে পরাস্ত, ব্যর্থ করার জন্য শত চেষ্টা হচ্ছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সংস্কার সংলাপ’ শীর্ষক সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে রাষ্ট্র সংস্কার পাঠ্যচক্র বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও গঠন করা যায়নি। এখন সত্যিকার অর্থে এই তিন দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথম প্রয়োগ হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু না হলে সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা ধরে রাখা যাবে না মন্তব্য করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং খাদ্য ও শিক্ষা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শিশু যদি দুবেলা খেতে না পায়, তাহলে সেই শিশুর শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে না।
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, শিক্ষা সর্বজনীন করতে চাইলে শিক্ষাদানের মাধ্যম যার যার মাতৃভাষায় করতে হবে। শিক্ষাকে সংকোচন নয়, প্রসারণ নীতিতে নিতে হবে। এ জন্য যে অর্থনীতির বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা সম্ভব।
কর্মমুখী শিক্ষার নামে শুধু চিকিৎসক ও প্রকৌশলী তৈরি করে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয় না বলে উল্লেখ করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মানবিক নাগরিক তৈরি করতে হবে। নাগরিক তৈরি করা মানে তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে। যদি এটা সত্যি হতো, তাহলে আমরা ১৫ বছর যাবৎ স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে থাকতে বাধ্য হতাম না।’
নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ শিক্ষার্থীদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোন পেশায় যাবে বা যাবে না, কী পড়বে কী পড়বে না, তার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবু সাঈদরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা বাস্তবায়নে সংবিধান, বিচার বিভাগ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারকাঠামো সংস্কার করতে হবে।
সেমিনারে শিক্ষা সংস্কার সংলাপের ধারণাপত্র তুলে ধরে শিক্ষক ও সংগঠক লিপি দেবগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্র নানাভাবে গরিব শিশুদের সঙ্গে বৈষম্য করছে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন, শিক্ষকদের বেতনবৈষম্যসহ নানা অসংগতি তুলে ধরেন।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিওর চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সমন্বয়ক চিনু কবির, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌস রহমান, কবি ও শিক্ষক আহমেদ মওদুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
More Stories
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন— সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী...
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা...
পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে যাবে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয়...
ছাত্রশক্তির নেত্রী জেদনীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামলী...
