ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি ভারতে তিন সপ্তাহ কাটিয়ে ফেলেছেন। এরমধ্যেই শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সবার কূটনীতিক লাল পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা ‘সাময়িকভাবে’ এ দেশে আসার অনুমোদন চেয়েছিলেন এবং তা মঞ্জুর হওয়ার পরই তিনি ভারতের মাটিতে পা রেখেছেন। যেহেতু হাসিনার লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে; তাই (নিয়ম অনুযায়ী) তার ভারতে অবস্থানের সময় ফুরিয়ে আসছে। খবর: হিন্দুস্তান টাইমসের।
বাংলাদেশ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা যখন দেশত্যাগ করে তখন তার কাছে শুধুমাত্র লাল পাসপোর্টই ছিল। সাধারণ সবুজ পাসপোর্ট ছিল না। ভারতের ভিসা নীতি অনুযায়ী, যেসব বাংলাদেশির কাছে কূটনীতিক লাল পাসপোর্ট আছে তারা ভিসা ছাড়াই ভারতে প্রবেশ এবং সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত শেখ হাসিনা ২০ দিন ভারতে কাটিয়ে ফেলেছেন। ফলে আর মাত্র ২৫ দিন পর বৈধ উপায়ে তার ভারতে থাকার সময় শেষ হয়ে যাবে। এরপর তিনি হয়ে যাবেন অবৈধ।
হিন্দুস্তান টাইমস আরো জানিয়েছে, কূটনীতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনার ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫১টি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়টি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তির মধ্যে পড়বে। ২০১৬ সালে চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় করা মামলার আসামি হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ বা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। কিন্তু এই চুক্তিতে হত্যা মামলার বিষয়টি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়া যদি মামলা ন্যায়বিচার না করার উদ্দেশ্যে করা হয় তাহলেও দুই দেশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ না করার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
গত দুই সপ্তাহে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে সব মামলা রুজু হয়েছে তার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনেরও নানা অভিযোগ আছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে ‘রাজনৈতিক’ বলে খারিজ করা কঠিন। তার ওপর ২০১৬ সালে যখন মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়, তখন এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল, যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করে তুলেছিল।
সংশোধিত চুক্তির ১০(৩) ধারায় বলা হয়েছিল, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না-করলেও চলবে – শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে। তার মানে দাড়াচ্ছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বদেশে যে সব মামলা দায়ের হয়েছে, তার কোনওটিতে যদি আদালত ‘ফেরার’ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়, তাহলে তার ভিত্তিতেই সরকার ভারতের কাছে তার হস্তান্তরের অনুরোধ জানাতে পারবে।
কিন্তু এরপরেও চুক্তিতে এমন কিছু ধারা আছে, যেগুলো প্রয়োগ করে অনুরোধ-প্রাপক দেশ তা খারিজ করার অধিকার রাখে। যেমন, অনুরোধ-প্রাপক দেশেও যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে’র মামলা চলে, তাহলে সেটা দেখিয়ে অন্য দেশের অনুরোধ খারিজ করা যায়। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে অবশ্য এটা প্রযোজ্য নয়, কারণ ভারতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হচ্ছে না বা অচিরে হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।
More Stories
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মোদির গভীর উদ্বেগ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র...
অজিত দোভালকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। সাক্ষাতে অজিত দোভালকে...
বাংলাদেশে বিজনেস ভিসা দেওয়া শুরু হয়েছে: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর...
খাগড়াছড়ির অশান্তির পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার ভারতের
চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল খাগড়াছড়ি বেশ কয়েকদিন অশান্ত ছিল। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, খাগড়াছড়িকে...
ভিসা জটিলতা অতি শিগগিরই সমাধান হবে: প্রনয় কুমার ভার্মা
পরিস্থিতির উন্নতি হলে খুব শিগগিরই ভিসা জটিলতার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রনয় কুমার ভার্মা।...
মোদিকে তীব্র আক্রমণ ওয়াইসির, ‘আপনার ঢাকার বোন দিল্লিতে বসে আছে’
ভারতের বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের’ উপস্থিতি। বিজেপির শীর্ষ নেতারা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী...
