Read Time:6 Minute, 38 Second

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগ এনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আল্লাহর বিচার অত্যন্ত নির্মম। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, যেখানে তার গোড়াপাতা আছে। এ কারণে বলছি, এখনো সময় আছে। আর ঝামেলা করবেন না। ঝামেলা করলে টিকতে পারবেন না। আজকে তো চেষ্টা করেছিলেন ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেবেন। কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা হতে দেয়নি। কারণ তারা হাসিনার চেহারা আর দেখতে চায় না।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ সরকারকে সহযোগিতা করব। এটা আমাদের সরকার, গণভ্যুত্থানের সরকার, আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদের ততক্ষণ সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। গণতান্ত্র্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। এর বিকল্প নেই।

অন্তবর্তীকালীন সরকার যতক্ষণ গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে ততক্ষণ তাদের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা সব সময় এই সরকারের পাশে আছি। দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে বিএনপি বর্তমান সরকারকে আমরা যৌক্তিকও সময় দেবো।

সরকারকে তাদের কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আরো দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সব চক্রান্তকারীরা সরকারের ভেতরে আছে তাদের অবিলম্বে বের করে দিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী এমনকি সরকারি কর্মচারীরা যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অন্যায়ভাবে কাজ করেছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, এদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইনে। তারা গণহত্যা চালিয়েছে, জনগণের ওপর অন্যায়-নির্যাতন করেছে। জনগণের টাকা লুণ্ঠন করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারের ওপর জনগণ আস্থা রেখেছে। একটু স্বস্তি ফিরে এলে তারা নির্বাচন দেবে। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে। আমরাও চাই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক। এ জন্য আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, গণতন্ত্র, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্র। এর কোনো বিকল্প নেই।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের নতুন ধোয়া তোলা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ক্ষেপিয়ে, তাদের ঢাল বানানোর কৌশল খুঁজছে আওয়ামী লীগ, যাতে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ভারতের সহযোগিতায় আবার কিছু করা যায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র বাদ দিয়ে আত্মসর্ম্পণের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ কীভাবে জ্বলে উঠতে পারে এবার আবার সবাই দেখেছে। জনগণ জেগে উঠলে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে না। তাই ভালোয় ভালোয় ঝামেলা না করে আত্মাসমর্পণ করেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কত প্রতাপশালী, কত অহংকার তাদের। কীভাবে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হল। একই কায়দার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আল্লাহর বিচার, তাদের এখন একইভাবে আদালতে তোলা হয়েছে।

নেতা-কর্মীদের বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় কাজে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি জিয়াউর রহমানের দল। অপবাদ দিতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। হাজার হাজর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কোনো মামলা থাকবে না। আসুন যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছি, সেভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সবাই কাজ করি।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্ব ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা মীল সরাফত আলী সপু, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post স্বাধীনতার গুরুত্ব বোঝাতে বাংলাদেশের উদাহরণ টানলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি
Next post ৭ রাষ্ট্রদূতকে অবিলম্বে দেশে ফেরার নির্দেশ
Close