পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘অবশ্যই আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, প্রয়োজনে প্রস্তুতি নেব। অবশ্যই আমরা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি।’ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফর শেষে বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা। জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পণ্য বিক্রি করার আগ্রহ থেকে নিজ স্বার্থ আদায়ে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের চাপ দেয় বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিদেশিদের চাওয়া–পাওয়া ও চাপ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু মান–ইজ্জত বেড়েছে ও উন্নয়ন হচ্ছে, ফলে সবাই আমাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়। তাই আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করে। আগে এতো মানুষ দেখা করতো না। বিদেশিরা মূলত তাদের পণ্য বিক্রি করতে আসে। এ জন্য চাপ সৃষ্টি করে, যেন তার কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, ফ্রান্স তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, ইউরোপ তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়।’
নিষেধাজ্ঞা কাদের ওপর দেওয়া হবে এবং কী প্রেক্ষাপটে দেওয়া হবে-জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি। পারি না? নিশ্চই পারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি। এগুলো সময়মত জানবেন।’ নিষেধাজ্ঞা দিতে কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে– উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুতি নেব। এত তাড়াহুড়া কিসের।’
তলেতলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী আপস হয়েছে– জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নাই, মাথাব্যথার কারণ নাই। আমরা কোনো চাপ অনুভব করি না। উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, ওনার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ভিসানীতি আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু নয়। উনি (ওবায়দুল কাদের) ঠিকই বলেছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করে তাদের জন্য হয়তো দুসংবাদ, যদি দুষ্টু লোক হয়। আমেরিকা তো সবাইকে ভিসা দেয় না। কয়েক হাজার লোক বছরে ভিসার জন্য আবেদন করে, এর মধ্যে কত লোককে ভিসা দেয়?’
দিল্লি–ওয়াশিংটনে কী আপস হয়েছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা বলতে পারব না। উনাকে (ওবায়দুল কাদের) জিজ্ঞাস করেন।’
বাংলাদেশেরও ভিসানীতি আছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘ভিসা নীতি সব দেশে আছে। আমাদের দেশেও আছে। আমরা সবেইকে ভিসা দেই না। আমরা ব্যক্তি বিশেষ কিংবা কোনো দেশকে কম ভিসা দেই। আমি যেটা বুঝতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির মূল উদ্দেশ্য, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারা আমাদের হাতকে শক্ত করার জন্য ভিসা নীতি চায়।’
ড. মোমেন আরও বলেন, ‘যারা নির্বাচনে আসবে না যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে নাই। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই নাই। কিন্তু কিন্তু তারা বিশ্বাস করে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র সুযোগ। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আমরাও গণতান্ত্রিক সরকার চাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি, একমাত্র আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে মাঝের সময়ে কিছু সামরিক–বেসামরিক সরকার ছিল, তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যায়।’
সম্প্রতি ভারতীয় সরকারি বার্তা সংস্থায় ২০১৪ এবং ১৮ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এক প্রতিবেদনে বলেছে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইসিউতে আছে’-এ বিষয়ে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম বহু লোক বহু প্রতিবেদন তৈরি করবে। আপনি (প্রশ্ন করা গণমাধ্যমকর্মীকে) নিজে প্রতিবেদন তৈরি করেন। অন্যের মুখোপেক্ষি হয়ে থাকবেন না। আল্লার ওয়াস্তে এই বদ অভ্যাসটা বাদ দেন। অন্য কেউ কিছু বললে লাফাইয়া উঠবেন। এটা বাদ দিয়ে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন কি অবস্থা। জনগণ যদি ভোট দেয় ওটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার আলাপ নিয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। হোওয়াইট হাউজের অন্য একজনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
More Stories
দায়িত্ব নেওয়ার সময় নির্বাচন দেওয়ার কোনো শর্ত ছিল না : সাখাওয়াত হোসেন
দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনই বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার...
জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজন ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে : এনসিপি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক...
আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া, আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হাসপাতালে নিতে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত...
‘আমি ভালো আর সব খারাপ’— আওয়ামী আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি ১৬ বছর ধরে।...
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
