Read Time:6 Minute, 58 Second

অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমাবেশে বক্তারা ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য বাম প্রগতিশীল শক্তিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সহ—সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শহিদুল ইসলাম সবুজ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল সাত্তার, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য।

সভায় কমরেড মাসুদ রানা বলেন, “দেশের জনগণ একদিক অর্থনৈতিকভাবে সংকটে আছে, অপরদিকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তার ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের এই শাসনে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ যা যা করতে হয় সব করছে। ফলে আওয়ামী লীগের উপর জনগণ প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ। জনগণ পরিবর্তন চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বৃহৎ ব্যবসায়ী শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী অন্য কোন দল আসলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। আজকের দিনে এই পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের রক্ষাকারী হয়ে যারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তাদেরকে ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটতেই হবে। তাই আজকের দিনে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো রক্ষা করতে হলে বাম গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলকে শক্তিশালী করতে হবে। আর চূড়ান্ত মুক্তি আসতে পারে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।”

কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি, অংশগ্রহণমূলক হয়নি, অথচ ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়ে তো প্রশ্ন থাকবে। কথার মালা সাজিয়ে, প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে, ভয়—ভীতি দেখিয়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে জনগণের কন্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনজীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। অনিয়ন্ত্রিত বাজার সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো মানুষের জীবনকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। দুর্নীতি লুটপাট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সরকার সর্বত্র আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নাই বরং একের পর এক বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোট কারচুপির প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এ অবস্থার অবসানে সব মানুষকে রাজপথে নামতে হবে।”

তিনি বলেন, “ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে দুঃশাসনের মাত্রা বাড়বে। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে কেউ ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারেনি। এবারও ভোটাধিকার বঞ্চিত করে, কৌশল করে, নির্বাচন কমিশন, আমলা আর নানা মহলকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা জনগণ রুখে দাঁড়াবে।”

কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “দেশে একটা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চলছে। এই সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার। এরা জনগণের মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে দমনের অস্ত্রে পরিণত করেছে। নিজেদের সকল অন্যায়কে মুক্তিযুদ্ধের আবেগের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতে চায়। ফলে দুর্নীতি ও দুঃশাসন চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধু ধ্বংস করে নাই তার বিপরীতে লুটপাটের চেতনা দ্বারা দেশ শাসন করছে।”

সমাবেশ থেকে আগামী ১৫—৩০ সেপ্টেম্বর পক্ষকালব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ও সারাদেশের উপজেরাতে সমাবেশ, ৫ অক্টোবর ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান, ৮—১৫ অক্টোবর জেলায় ও বিভাগীয় শহরে পদযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলসমূহের কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল করে এই সমাবেশ যোগ দেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী
Next post বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও ‘টার্গেটেড স্যাংশন’ আরোপের দাবি অস্ট্রেলিয়ান সিনেটরের
Close