যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের সরকারি অফিস ও বাসভবন হোয়াইট হাউসের বিশেষ একটি কক্ষ ‘সিচুয়েশন রুম’ ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢেলে সাজানো হয়েছে। এজন্য ব্যয় করা হয়েছে ৫০ মিলিয়ন ডলার। এই কক্ষটি সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের জন্যে সংরক্ষিত থাকে। সেখানে বসে দেশটির প্রেসিডেন্টরা ইতিহাসের সাক্ষী হন, বিভিন্ন ইতিহাস প্রত্যক্ষ করেন, অতি গোপন গোয়েন্দা তথ্য পান।
সিচুয়েশন রুম তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬১ সালে। এই কক্ষটিকে ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
এই সিচুয়েশন রুমের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন মার্ক গুস্তাফসন। তিনি এই রুমের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করে থাকেন। তিনি জানান, অত্যন্ত সুরক্ষিত এই কক্ষটিতে নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া উন্নতমানের প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। এজন্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। বছরব্যাপী সংস্কারের অংশ হিসেবে কংক্রিট এবং তারগুলো সরানোর জন্য পাঁচ ফুট গভীর মাটি খনন করা হয়েছে। দেয়ালগুলোতে মেটাল যুক্ত করা হয়েছে।
গুস্তাফসন মজা করে বলেন, ‘সিচুয়েশনের রুমের রাজমিস্ত্রির জন্য কোন টপ সিক্রেটের প্রয়োজন ছিল না।’ তবে গ্রাউন্ডের কাজের চেয়ে পরবর্তী ধাপগুলো বেশি সংবেদনশীল, জানান তিনি।
হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইং-এ মাটির তলায় অবস্থিত এই সিচুয়েশন রুম। এটি মাত্র একটি কক্ষ নয়, বরং বেশ কয়েকটি ঘর আছে যেগুলোকে বলা হয় সিচুয়েশন রুম। সেখানে স্নাতক শ্রেণির ক্লাসরুমের আকারের তিনটি বৈঠকরুম রয়েছে। যেখানে সম্মেলন করার মতো বহু মানুষ বসতে পারেন। দুটি ব্রেকআউট রুম রয়েছে- যেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা তাদের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে ফোন করতে পারেন। এবং একটি কমান্ড সেক্টর রয়েছে যেটি ওয়াচ ফ্লোর নামে পরিচিত। যেখানে একদল কর্মকর্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা দিনের পর দিন পালাক্রমে কাজ করেন। তাদেরকে বলা হয় ‘ওয়াচ টিম’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার ওপর নজর রাখেন তারা। সন্ত্রাসী হামলা, গৃহযুদ্ধ অথবা অন্যান্য যেকোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে তারা সেখানে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
নতুন পরিবর্তনগুলি বেশি দৃশ্যমান হয়েছে জন এফ. কেনেডি কনফারেন্স রুমে। সেখানে মেহগনি কাঠের ফার্নিশের সঙ্গে নৌবাহিনীর কার্পেট ব্যবহার করা হয়েছে। দেয়ালজুড়ে অতি আধুনিক মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সময়-অঞ্চলসহ একটি ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন হটস্পটগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে-যা আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গুস্তাফসন বলেন, তিনি এটিতে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিলন ঘটিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার এই সংস্কার কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন এবং এটি ঘুরে দেখেন। সেসময় তিনি ফিতা কেটে এটির উদ্বোধন করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ অফিসের জন্য সীলগুলি একটি আলমারিতে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে করে কে সভা পরিচালনা করছে তার ওপর নির্ভর করে সীলগুলো সহজে পরিবর্তন করা যায়। এছাড়া এই সীলগুলো হোয়াইট হাউসের ফটোগ্রাফারদের অনুরোধে প্রায় দুই ফুট ব্যাস বাড়ানো হয়েছে।
এমনকি ‘দ্য ওয়েস্ট উইং’ এবং ‘হোমল্যান্ড’ শোর মতো করে নিরাপদে তথ্য গ্রহণ এবং প্রেরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশি নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। শীর্ষ গোয়েন্দা তথ্য গ্রহণ করেন, বিশ্লেষণ করেন এবং বাস্তব ইতিহাসের উন্মোচন করেন।
ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টের স্টিফেন আফটারগুড, সরকারের গোপনীয়তার বিষয়ে যিনি একজন বিশেষজ্ঞ, তিনি বলেছেন, ‘এই কক্ষটি এমন একটি জায়গা যেখানে পরমাণু শক্তির সাথে সম্পর্কিত কর্মকর্তারাসহ যুক্তরাষ্ট্রের গ্ররুত্বপূর্ণ সব বাহিনীর মধ্যে বৈঠক হয়, যেখান থেকে গোয়েন্দা তৎপরতার উপরেও নজর রাখা হয়।’
এই সিচুয়েশন রুমের এক কোনে বসেই প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের বাড়িতে চালানো অভিযান প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাকে ঘিরে বসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
সেসময় সিচুয়েশন রুমে তোলা একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায় এবং তাকে উল্লেখ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত হিসেবে।
সিচুয়েশন রুমের ভেতরে কারো মোবাইল ফোন কিংবা ব্যক্তিগত কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। ওবামা প্রশাসনের সাবেক একজন কর্মকর্তা ব্রেট বুয়েন বলেছেন, ‘কক্ষটির বাইরে ছোট্ট একটি বক্সে কিম্বা লকারে ফোন রেখে ভেতরে যেতে হয়। মিটিং-এর সময় সাথে করে লকারের ছোট্ট একটি চাবিই শুধু সাথে করে নিয়ে যাওয়া যায়।’
সিচুয়েশন রুমে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কিংবা অন্যান্য আরও অনেক বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা আছে হোয়াইট হাউজের কিছু পুস্তিকায়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজের মাটির নিচে বেজমেন্টের হলওয়েতে অ্যালার্মের মতো নিরাপত্তাজনিত কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আছে। তবে সিচুয়েশন রুমে ঢোকার যে পথ সেটি দেখতে বিমানবন্দরের গেটের চাইতেও সাধারণ।
সিচুয়েশন রুমের ভেতরে যারা যাওয়া আসা করেন তাদের ওপর নজর রাখা হয়, তবে সেটা অনানুষ্ঠানিকভাবে। সেসব প্রোটোকল সম্পর্কেও তাদের জানা আছে।
More Stories
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প–মামদানি বৈঠকে প্রশংসা আর সৌহার্দ্যের বার্তা
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। দুই...
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচ-১বি ভিসা’ পুরোপুরি বাতিলের উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার সবচেয়ে বড় ভিসা কর্মসূচি এইচ-১বি পুরোপুরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভিসা ফি শতগুণ বাড়ানোর...
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবিসিকে চিঠি পাঠালেন ট্রাম্প
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসির...
৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো...
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মামদানির হাতে ব্যালট-খামে বাংলায় লেখা
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার আজ মঙ্গলবার নগরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের লক্ষ্যে...
অন্য দেশের ‘সরকার বদলের’ মার্কিন নীতি শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড
কোনো দেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি মেনে আসছিল, তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা...
