Read Time:5 Minute, 51 Second

গ্রিসে বসবাসরত অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে কয়েকবার বৈধতার সুযোগ হয়েছে, প্রতিবারই বিভিন্ন ডিটেনশন থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় ছোট-খাটো অপরাধে জেলে থাকা কয়েদিদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওয়তায় মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। সব কিছুরই উদ্দেশ্য ছিল, বৈধতার সুযোগে কেউ যেনো অবৈধ না থাকে। কিন্তু এই বার সরকারিভাবে দুই দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সমঝোতা স্বাক্ষরের পর যে অস্থায়ী বৈধতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাতে নানা শর্ত থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন প্রবাসীরা।

গ্রিক সরকারের প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ রয়েছে, দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ প্রবাসীদের মৌসুমী কর্মী হিসেবে ৫ বছরের জন্য বৈধতা দেওয়া হবে। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এরই মাঝে বছরে ৯ মাস গ্রিসে, বাকি ৩ মাস বাংলাদেশে থাকতে হবে। ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার অনুমতি থাকবে না। দেশ থেকে পরিবার নিতে গ্রিসে আসতে পারবে না। এসব শর্তের পরও দূতাবাসে বৈধতার জন্য নিবন্ধন করছেন অনেকেই।

অপর দিকে, অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে নতুন করে অবৈধ প্রবাসীদের ধর-পাকড়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে দেশটির পুলিশ। দূর-দূরান্ত থেকে নিবন্ধন করতে মানোলদা গ্রামসহ এথেন্সের বাহিরের বিভিন্ন শহর থেকে দূতাবাস যাওয়ার পথে অনেক অবৈধ প্রবাসীদের আটক করছে দেশটির পুলিশ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রিসে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পে দীর্ঘদিন বন্দি থাকা বাংলাদেশিরাও রয়েছেন ‘ডিপোর্ট’ আতঙ্কে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নতিস মিতেরাকিস, এই সময় বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিসে প্রতি বছরে ৪ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মৌসুমি কাজের সুযোগ পাবেন। তাদের সরকারিভাবে ভিসা দেওয়া হবে গ্রিসে আসার জন্য। পাশাপাশি গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অবৈধ প্রবাসীদের ৫ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এবার অবৈধ বাংলাদেশিদের আবেদনের জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করেছে দেশটির সরকার। যারা ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন তারা এখন অনলাইন প্লাটফর্মে গিয়ে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের নতুন করে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিলেও নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই শর্ত মেনে অনেক অবৈধ প্রবাসী বৈধতা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। কারণ অনেকেরই এখানে আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে ৬/৭ বছর ধরে পরিবারের কাছে যেতে পারছেন না। আবার অনেকেই মনে করছেন পুলিশের হাতে আটক হওয়ার চেয়ে এই বৈধতা নেওয়া উত্তম।

বৈধ হওয়ার সুযোগ নেওয়া অনেক অবৈধ বাংলাদেশি জানিয়েছে, বৈধ হওয়ার জন্য অনেকেই দূতাবাসে যাওয়ার পথে আটক হচ্ছেন। গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশাল একটি অংশ অবৈধ হওয়ায় মানোলদা গ্রামে বসবাস করছেন। সেখানে কৃষি কাজ নিয়োজিত রয়েছেন তারা। বৈধতার আওতায় আসতে হলে প্রথমেই যেতে হয় দূতাবাসে। কিন্তু রাস্তায় পুলিশ ধরপাকড় করছে। অনেকেই আর দূতাবাসে পৌঁছাতে পারেন না। তাই অনিয়মিত প্রবাসীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

অপরদিকে, কয়েক শতাধিক বাংলাদেশি গ্রিসের বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রয়েছেন। তারা সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্ত হওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন স্থানীয় দূতাবাসের কাছে। এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ জানান, ‌‘এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা চলছে। যারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন তাদের সবাইকে বৈধতার আওতায় আনা হবে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মালয়েশিয়ায় বৈধ হতে ৫ দিনে আবেদন ৫০ হাজার
Next post যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বেলুনটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ যন্ত্র, জানালো চীন
Close