Read Time:6 Minute, 18 Second

‘গার্ড’ কিনলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এই ‘গার্ড’ রক্ষী নয়। বরং একে ‘রক্ষাকারী বর্ম’ বলা যেতে পারে। তবে এমন বর্ম যা গায়ে চাপানো যায় না। চেপে বসা যেতে পারে।

বর্মটি সম্প্রতি দেখা গিয়েছে দিল্লিতে। হায়দরাবাদ হাউসের সামনে দাঁড় করানো ছিল। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলেন মোদি।

ঝকঝকে কালো। জানালায় কালো কাচের আড়াল। চার চাকার লিমুজিন। এটিই মোদির নতুন বাহন। নতুন বর্ম। নাম ‘গার্ড’। খবর-আনন্দবাজার।
‘গার্ড’ মোদির জিম্মায় থাকা এক ঝাঁক বাহন তালিকায় নতুন সংযোজন। এই গাড়িটি প্রস্তুত তৈরি করেছে মার্সিডিজ। গার্ডের পুরো নাম মার্সিডিজ-মে ব্যাচ এস ৬৫০ গার্ড। এটি মার্সিডিজ-এর এস সিরিজের সাম্প্রতিকতম মডেল।

মার্সিডিজ-এর ‘এস সিরিজ’ গাড়ির দুনিয়ায় বেশ দর। তার কারণ এই গাড়ির ব্যবহারকারীরা। মূলত রাষ্ট্রপ্রধানরাই এস সিরিজের গাড়ির ক্রেতা। কেন না বিশেষজ্ঞদের কথায় এস সিরিজের মতো যাত্রী-নিরাপত্তা খুব কম গাড়িই দিতে পারে।

মোদি তার বাহনের বিষয়ে বরাবর শৌখিন। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সময় থেকেই তার বাহন নির্বাচন নজরকাড়া। প্রথমে একটি বুলেটপ্রুফ মাহিন্দ্রা স্কর্পিও চড়তেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পুরনো বাহন বদলান। প্রধানমন্ত্রী মোদির বাহন হয় বিএমডব্লু-র সেভেন সিরিজের একটি গাড়ি। বিএমডব্লু-র উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন যে সমস্ত গাড়ি রয়েছে, তার মধ্যে একটি ওই গাড়ি।

সাত বছরে আরও দু’বার গাড়ি বদলান মোদি। প্রথমে ল্যান্ড রোভারের রেঞ্জ রোভার ভোগ গাড়িটি কেনেন। তারপর ফের বদলায় বাহন।

‘গার্ড’-এর আগে মোদির শেষ কেনা গাড়িটি ছিল টয়োটার ল্যান্ড ক্রুাজার। এই গাড়ির বৈশিষ্ট্য ছিল ১৬টি ক্যামেরায় নজরদারির ব্যবস্থা। পাশাপাশি টয়োটার এই গাড়িতে ব্যবহারকারীর চাহিদা মতো পরিবর্তনও আনা যেত।

টয়োটার এই গাড়িরও অবশ্য নাম কাটা গিয়েছে মোদির গাড়ি বহর থেকে। মোদির নতুন বিশ্বস্ত সঙ্গী ‘গার্ড’।

এস ৬৫০ গার্ড-এর বড় গুণ হল গুলি মোকাবিলা করার ক্ষমতা। গার্ড বর্মভেদী বুলেটকেও থামাতে পারে। এমনকি একে-৪৭ এর গুলির আঘাতও প্রতিহত করতে পারে মোদির নতুন বাহন। বিস্ফোরণেও টিকে যাবে। দু’মিটার দূরত্ব থেকে যদি কেউ ১৫ কেজির বিস্ফোরকও ফাটায়, তা হলেও বনেটে একটু টোল পড়বে না ‘গার্ড’-এর।

এস ৬৫০-এর জানালার ভিতরে রয়েছে পলি কার্বোনেটের আস্তরণ। মাইনজাতীয় বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে গাড়ির নীচের অংশেও রয়েছে বিশেষ সুরক্ষা বর্ম। এমনকি যদি গ্যাস হামলাও হয়, তবে আরোহীকে পরিশ্রুত বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা করবে গার্ড।

এই গাড়ির ইঞ্জিন ৬.০ লিটার টুইন টার্বো ভি ১২। যা ৫০০ হর্সপওয়ার এবং ৯০০ নিউটন মিটার শক্তি উৎপাদন করতে পারে। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারে।

টায়ার পাংচার করেও বিপদে ফেলা যাবে না মোদির নতুন গাড়িকে। কারণ গাড়ির চারটি চাকাই নিরেট বা ফ্ল্যাট টায়ার। মোদির নতুন বাহনের নিরাপত্তাকে ভিআর -১০ স্তরের সুরক্ষা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে গাড়ির জগতে এটিই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।

রাতের অন্ধকারে দূর থেকে যে কোনো বস্তুকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই গাড়ির। এমনকি চালকের উল্টোদিকের আয়নায় ব্লাইন্ড স্পট থেকেও যদি কোনো গাড়ি হামলা করতে চায়, তবে তা ধরা পড়বে চালকের চোখে।

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে গাড়ির পিছনের আসনেও রয়েছে এয়ারব্যাগ সুরক্ষা। এমনকি সিট বেল্ট যাতে বুকের উপর অতিরিক্ত চাপ না দেয়, তার জন্য বেল্টের ভিতরেও আছে এয়ারব্যাগ।

সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা বিচার করে এই ধরনের গাড়ি কেনার অনুরোধ জানায় তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ। মোদির ক্ষেত্রেও তারাই এই গাড়ি কেনার অনুরোধ জানিয়েছে।

একটি এস ৬৫০ গার্ডের দাম ১২ কোটি রুপি। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য দু’টি গাড়ি কেনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মোদি ব্যবহার করবেন। অন্যটি থাকবে সম্ভাব্য হামলাকারীকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আইনমন্ত্রীর মত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই
Next post যুক্তরাষ্ট্র খুনিদের আশ্রয় দিয়ে আবার ন্যায়বিচারের কথা বলে: প্রধানমন্ত্রী
Close