ইতালিতে ১৮ বছরের বছরের কম বয়সী অভিভাবকহীন অভিবাসী যারা রয়েছে তাদের মধ্যে সব থেকে বেশি এসেছে বাংলাদেশ থেকে। শুধু ২০২০ সালে দেশটিতে পাড়ি জমানো এমন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশই বাংলাদেশি।
এমনই একটি তথ্য প্রকাশ করেছে শিশুদের জন্য কাজ করা এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন।
এই বিশাল সংখ্যাক অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি দালালদের হাত ধরে আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্যের মরুভূমি, জঙ্গল, ভয়ংকর উত্তাল সাগড় পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। এই দীর্ঘ ঝুঁকিপূর্ণ পথে আসতে দালালদের হাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ করে চুক্তি করে আসেন। পথিমধ্যে কয়েক হাত বদল হয়ে নানা নির্যাতনে অনেকে মারা যায়, যারা সাগড়ে নৌকায় উঠে তাদের মধ্যে অনেকেই সাগরেই ডুবে মরে। খুব কম মানুষের ভাগ্য প্রশন্ন হলে ঢুকতে পারে ইউরোপে।
ইউরোপে ঢুকার পর শুরু হয় আরেক পরীক্ষা, স্থায়ী হওয়ার জন্য সেই অগ্নিপরীক্ষায় কারো কারো ১০/১২ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
সেভ দ্যা চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশ থেকে ইতালিতে আসা ১৮ বছরের কম বয়সী অভিবাসী রয়েছেন মোট সাত হাজার ৮০ জন, যাদের সঙ্গে তাদের অভিভাবক নেই। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ ভাগ বেশি হলেও ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩৪ ভাগ কম।
ইতালিতে গত বছর পর্যন্ত নিবন্ধিত এমন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবাসীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি, যাদের সংখ্যা এক হাজার ৫৫৮ জন। এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ ভাগ বেশি। এরপরই রয়েছে তিউনিসিয়া থেকে আসা অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীরা, যাদের সংখ্যা এক হাজার ৮৪ জন।
২০২০ সালে মোট ৩৪ হাজার ১৫৪ অভিবাসী ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের মধ্যে চার হাজার ৬৮৭ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অভিভাবকহীন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১ দশমিক সাত শতাংশ এসেছে তিউনিসিয়া থেকে। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা অপ্রাপ্তবয়স্করা, যার হার সাড়ে ২২ শতাংশ। সোমালিয়া থেকে আসা এমন অপ্রাপ্তবয়স্কের হার ছয় দশমিক দুই শতাংশ।
ভাষা, সংস্কৃতি ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে কোন রকমের ধারণা না থাকা বিদেশের মাটিতে যে কারো জন্যই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। মহামারির সময়ে ইতালির অভিবাসী শিশুদের জন্য তা আরো বড় সংকটের কারণ হয়ে উঠেছে, বলছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
আর এ কারণে খোলা হয়েছে সেইভ দ্যা চিলড্রেন হেল্প লাইন। ২০২০ সালে ১৮ বছরের নীচের এক হাজার ১১৫ অভিবাসীকে সহায়তা দিয়েছে তারা। ব্যাহত হওয়া শিক্ষা কার্যক্রম, পারিবারিক পুনর্মিলন প্রক্রিয়া ও স্বেচ্ছাসেবি অভিভাবক সংক্রান্ত বিষয় ছিল এর মধ্যে অন্যতম।
২০২০ সালে তারা মোট এক হাজার ২৭৬টি ফোন কল পেয়েছে শিশুদের সহায়তা চেয়ে। ফোন করে সহায়তা চাওয়াদের মধ্যে শিশুদের পাশাপাশি পূর্ণবয়স্করাও রয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ১১৫ জনকে সহায়তা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০৭ জন ছিলেন পূর্ণবয়স্ক আর ৬০৮ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। সবচেয়ে বড় সহায়তার চাহিদা ছিল ভাষা সংক্রান্ত।
ইতালির অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটি জানায়, ইতালিতে অভিভাবকহীন অভিবাসী বাড়ছে। আর এ ব্যপারে সরকারের আরো মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।
More Stories
বিজয়ের ৫৫ বছরে লস এঞ্জেলেসে কমিউনিটির প্রাপ্তি
- কাজী মশরুল হুদা বিজয়ের ৫৫ বছর হতে চলেছে। প্রায় ২ কোটির মত প্রবাসী বাংলাদেশী বিশ্বজুড়ে বসবাস করছে। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে...
গণঅভ্যুত্থানের সময় আমিরাতে আটক ২৪ বাংলাদেশি মুক্তি পাচ্ছেন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক হওয়া আরও ২৪ বাংলাদেশি নাগরিক মুক্তি পাচ্ছেন। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর)...
থাইল্যান্ডের ই-ভিসা নিয়ে সতর্কবার্তা দূতাবাসের
বাংলাদেশের কয়েকটি এজেন্সি ২-৩ ঘণ্টায় থাই ই-ভিসা পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। যা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ রয়েল থাই দূতাবাস।...
মামদানির জয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা রহিম
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। কিন্তু তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন...
বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের ভিসা গণহারে বাতিলের ক্ষমতা চাইছে কানাডা
কানাডার সরকার বিদেশিদের গণহারে ভিসা বাতিলের ক্ষমতা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারত ও...
দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে প্রত্যর্পণে কাজ করছে মালয়েশিয়া
বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর এবং তার সহযোগী রুহুল আমিন স্বপনের প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ নিয়ে কাজ...
