Read Time:5 Minute, 11 Second

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনার শেষ নেই। ফুটবল আসরটির প্রস্তুতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে।

এক বিশেষ প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ১০ বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর প্রস্তুতিতে দক্ষিণ এশিয়ার সাড়ে ৬ হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

গত এক দশকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে- যারা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশ থেকে পাওয়া নির্ভরযোগ্য ও সরকারি তথ্য অনুসারে গার্ডিয়ান বলছে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত কাতারে ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮।

কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন সেখানে।

২০২০ সালের শেষভাগের তথ্য এ হিসাবে নেই বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে শ্রমিক সরবরাহে এগিয়ে থাকা ফিলিপাইন ও কেনিয়ার নাগরিকদের মৃতের সংখ্যাও জানা যায়নি। ফলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যাটি আরও বড় বলে ধারণা গার্ডিয়ানের।

বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য গত এক দশকে অভাবনীয় সব প্রকল্প হাতে নিয়েছে কাতার। এর মধ্যে সাতটা নতুন স্টেডিয়াম বানানো হয়েছে। এ ছাড়া নতুন একটি বিমানবন্দরসহ নতুন রাস্তাঘাট ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

ফলে এত বড় বড় স্থাপনা ও উন্নয়নকাজের জন্য অসংখ্য শ্রমিকের দরকার হয়েছে কাতারের। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এখন ২০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক অবস্থান করছেন দেশটিতে।

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টসের পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বলছেন, ‘২০১১ সাল থেকে কাতারে যেসব প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গেছেন।’

এদিকে গত ১০ বছরে যত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই স্বাভাবিক বলে দাবি করেছে কাতার। অথচ স্টেডিয়াম বানানোর সময় ৩৭ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন। যদিও তাদের ৩৪ জনের মৃত্যুকেই বাইরের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যত শ্রমিক মারা গেছেন, তার ৬৯ ভাগকেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। ১২ ভাগ মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। ৭ ভাগ মৃত্যু আত্মহত্যায়। আর শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুকে বলা হয়েছে কাজের পরিবেশের সঙ্গে জড়িত।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, কাতারে বছরের অন্তত চার মাস প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। যার ফলে হৃদ্‌ক্রিয়া আক্রান্ত হয়ে শ্রমিকেরা মারা যায় বেশি। দেশটির নিজস্ব আইনজীবীরাও এ নিয়ে ময়নাতদন্তের পরামর্শ দিয়েছিল। যদিও সরকার সেটি পাত্তা দেয়নি।

অন্যদিকে, কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা বিশ্ব ফুটবলের প্রধান সংস্থা ফিফা জানিয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে যত নির্মাণকাজ হচ্ছে সেই তুলনায় ফিফা বিশ্বকাপের নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার হার বেশ কম। এখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার বিষয়টা মানা হয়।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
Next post লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই
Close