Read Time:8 Minute, 22 Second

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তারা দুইজনই ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আজ শনিবার এক প্রকাশনার অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘দি ইউনিভার্সেল’-এর উদ্যোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা নতুন গ্রন্থ ‘করোনাকালে বাংলাদেশ’ এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। খন্দকার মোশাররফের ইতিমধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের কারাগারে ৬১৬দিন’সহ ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক যিনি, ইতিহাসের যার আলাপের প্রয়োজন নেই তাকে নিয়ে ছোট করার একটা অপরাধ আছে। এই যে দ্বি-চারিতা- এর কারণটা কোথায়? মৌচাকে ঢিল খোঁচা খেতে হয়। আমার মনে যে প্রশ্নটা আসে, আমি যে প্রশ্নটা রেখেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী মুক্তিযোদ্ধা? ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় প্রশ্নটা আনছি আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কি মুক্তিযোদ্ধা? আমি মনে করি তারা দুইজনই মুক্তিযোদ্ধা।’

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া কেন মুক্তিযোদ্ধা তার কারণও ব্যাখ্যা করেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কারণটা এবার বলি। হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। উনি তখন গর্ভবতী। উনি কোথায় অবস্থান করেছিলেন? পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রেশন খেয়েছেন এবং ধানমন্ডিতে সম্ভবত ২২ কি ৯ নং বাড়ি, সিএসপি একেএম আহসান সাহেবের বাড়িতে প্রায় ৮ মাস কাটিয়েছেন।উনার (শেখ হাসিনা) দুই ভাই (শেখ কামাল ও শেখ জামাল) সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আমরা যদি খালেদা জিয়ার বিষয়টাতে আসি। তার স্বামী একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বহমান শক্তিমান সামরিক সজ্জিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা সত্যি কথা পহেলা বার যখন উনি ঘোষণা দেন তখন বলেছিলেন, আই মেজর জিয়া ডিক্লার্ড দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্স। তারপরে যখন দ্বিতীয়বার ঘোষণা দেন তখন একে খান বললেন, এই জাতীয় ঘোষণা হলে মনে হবে এটা সামরিক ক্যু হয়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবে দিতে হবে। তারপরেরটায় যে ড্রাইফটা করেন, আই মেজর জিয়া অনবিহাফ অব আওয়ার গ্রেট লিডার শেখ মুজিবুর ‍রহমান ডিক্লার্ড দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্স। প্রথম যে ঘোষণা সেখানে উনি নিজেকে প্রেসিডেন্টও বলেছিলেন। এটা ইতিাহাসের সত্য- উনি উনি কয়েক ঘণ্টার জন্য আমাদের বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বেচারি খালেদা জিয়া একটা ছোট সন্তান যাকে আপনারা কেউ কেউ বেশি পছন্দ করেন, কেউ কম করেন তারেক জিয়া। তাকে নিয়ে একের পর এক বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আত্মগোপন করে বেড়াচ্ছেন। আত্মগোপন করেছেন আবদুল্লাহ সাহেবের বাসায়। তারা তাকে আশ্রয় দেন, তারা তাকে লুকিয়ে রাখেন। যখন না পারেন পরে এক সময়ে অনেক কষ্ট করে খালেদা জিয়া ঢাকায় এসে মৌচাকের কাছে একজনের বাড়িতে ছিলেন। পরে এক সময়ে ধরা পড়ে যান। পরে তাকে ক্যান্টনমেন্ট আটকিয়ে রাখা হয়। উনি ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী। ঠিক যেভাবে শেখ মুজিবুবর রহমানও ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী ছিলেন। ঢিল ছুড়াছুড়ি করলে, সরকার পাগলামি করলে যে নতুন কথা আসবে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গোপনে ঢাকায় এসে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি স্মৃতি এবং পরে কলকাতায় গিয়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি তাজউদ্দিন সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম-আমার মায়ের স্ট্যাটাস কী? উনি বলেছিলেন, অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা। অকারণে কে মুক্তিযোদ্ধা কে মুক্তিযোদ্ধা না- এটা নিয়ে।’

জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার প্রস্তাবের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর উত্তম একটা প্রমাণিত সত্য। এই উপাধি তো পাকিস্তান দেয় নাই, শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন। উনি তো কোনো দিন প্রশ্ন করবেন নাই- জিয়া বেটা তোরে কে কইছে আমার নামে ঘোষণা দিতে। বরংঞ্চ তাকে প্রমোশন দিয়েছেন। আজকে আপনারা কাকে এই প্রশ্ন উঠাচ্ছেন। এই প্র্রশ্ন উঠিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে অপমান করছেন, বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছেন, তাকে ছোট করছেন। ওই যে বললাম, মৌচাকে যদি ঢিল মারেন আজকে প্রশ্ন উঠতে পারে সিরাজ সিকদারের বিচার নিয়ে। এই বোকামি করা এটা পাগলামীর নামান্তর।’ পাগলামী যারা করছেন তাদেরকে ক্ষমার চোখে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, আইন বিভাগের অধ্য্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও দি ইউনিভার্সেল এর প্রকাশক শিহাব উদ্দিন ‍ভুঁইয়া।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, আব্দুস সালাম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ নেতারাও।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post এ টি এম শামসুজ্জামান আর নেই
Next post ওবায়দুল কাদেরের ভাইকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি
Close