সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি সাময়িক স্থগিত করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক অনুমোদিত কোটি কোটি ডলারের অস্ত্রের লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি রুটিনমাফিক সিদ্ধান্ত। নিয়ম অনুযায়ী নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর আগের প্রশাসনের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত পুনরায় খতিয়ে দেখে। খতিয়ে দেখার পর ঠিক করা হবে যে, সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, নাকি তা বাতিল হবে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালেরযুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০টি লকহিড-মার্টিন এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে কিনছিল আমিরাত। গত ৬ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর গত ২৯ ডিসেম্বর ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবকে তিন হাজার প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন করে। ২৯০ কোটি ডলার দিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র কিনছিল সৌদি আরব।
ট্রাম্প প্রশাসন যখন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তখনই বাইডেন সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি সেসময় বলেছিলেন, এই অস্ত্র ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার কাজে ব্যবহার করা হবে।
তবে বাইডেনের দাবিকে গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। এ বিষয়ে ট্রাম্প সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এই অস্ত্র বিক্রিকে সামনে রেখেই আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদন করেনি। সেখানে বলা হয়, মার্কিন কংগ্রেস আগে পর্যালোচনা করবে, তারপর এই ধরনের অস্ত্র বিক্রিতে সায় দেবে। ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মার্ফি বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প জানেন, কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবে না। তাই তিনি আইনের ফাঁক খুঁজে নিয়ে অনুমোদন ছাড়াই অস্ত্র বিক্রি করতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন সৌদির সামনে কোনো জরুরি অবস্থা নেই। তারা আসলে ওই অস্ত্র ইয়েমেনে ব্যবহার করতে চায়।’
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন, ‘বাইডেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আমরা ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে সমর্থন শেষ করবো।’
বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য মুলতুবি করা হচ্ছে। তবে আমিরাতের বিষয়টি ভিন্ন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের প্যাকেজে লট, যার মধ্যে জেট ফাইটার এবং ড্রোন রয়েছে সেটি অনেক বছরের জন্য সরবরাহ করা হবে না।
এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কংগ্রেস এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পকে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে কত সময় লাগবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এক টুইটবার্তায় ওয়াশিংটনের আমিরাত দূতাবাস বলেছে, পূর্ববর্তী প্রশাসনের মতোই নতুন প্রশাসনও বর্তমান নীতিমালা পর্যালোচনা করবে বলে প্রত্যাশা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমিরাত দূতাবাস জানিয়েছে, এফ-৩৫ এই অঞ্চলে আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রতিনিধিত্ব করে। নতুন সংলাপ এবং সুরক্ষা সহযোগিতার সমান্তরালে আঞ্চলিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে সহায়তা করে।
তবে ওয়াশিংটনের সৌদি দূতাবাস বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এছাড়া বাইডেন প্রশাসন আর কোন কোন অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখা হবে তা জানায়নি।
More Stories
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প–মামদানি বৈঠকে প্রশংসা আর সৌহার্দ্যের বার্তা
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। দুই...
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচ-১বি ভিসা’ পুরোপুরি বাতিলের উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার সবচেয়ে বড় ভিসা কর্মসূচি এইচ-১বি পুরোপুরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভিসা ফি শতগুণ বাড়ানোর...
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবিসিকে চিঠি পাঠালেন ট্রাম্প
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসির...
৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো...
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মামদানির হাতে ব্যালট-খামে বাংলায় লেখা
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার আজ মঙ্গলবার নগরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের লক্ষ্যে...
অন্য দেশের ‘সরকার বদলের’ মার্কিন নীতি শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড
কোনো দেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি মেনে আসছিল, তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা...
