Read Time:6 Minute, 23 Second

রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ভারতের। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই চুক্তি সম্পন্ন হলে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের গবেষণা শাখা ‘কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)‌‌’ প্রতিবেদনে এ কথা উঠে এসেছে বলে জানায় ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম।

কংগ্রেস সদস্যদের জন্য সিআরএস-এর তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি আমেরিকার স্বার্থবিরোধী। নিষেধাজ্ঞা আইনের আওতায় ভারতের ওপর অবরোধ আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।’

বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেস সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সে ব্যাপারে সংস্থাটি গবেষণাভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বড় দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধিত্ব থাকে।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেড় বছর আগেও এ ইস্যুতে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ট্রাম্প প্রশাসন তখন দিল্লিকে সাফ জানিয়ে দেয়, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত। এবার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর প্রতিবেদনেও একই ধরনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।

সিআরএস-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ওয়াশিংটনের সঙ্গে আরও প্রযুক্তি শেয়ারিং এবং সহ-উৎপাদনে আগ্রহী। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার প্রতিরক্ষা নীতিতে, এ খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছে।

সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগীর মর্যাদা হারাতে পারে ভারত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনসহ নানা সহযোগিতা সত্ত্বেও ভারত আরও দ্রুততার সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংগ্রহে তৎপর রয়েছে।

২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার কাছ থেকে এস -৪০০ প্রযুক্তি কেনার জন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর বিমান এবং ড্রোনও ধ্বংস করা যাবে।

২০১৯ সালের গোড়ার দিকে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে এস-৪০০ কেনার চুক্তি বাতিল করলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টার্মিনাল হাই অলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) এবং প্যাট্রিয়ট-৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।

২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রো স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট’ আইন বলবৎ করে। এই আইন অনুযায়ী, কোনও দেশ রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম কিনলে সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। এখন ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে সেটা এই আইনের আওতায়ই করা হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, সিআরএস-এর প্রতিবেদন মার্কিন কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদন নয়। এটি সরাসরি কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়। তবে আইনপ্রণেতারা যেন বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেজন্য সংস্থাটি বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অবহিত করে থাকে।

সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দিল্লি-মস্কো সখ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেন। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় ইতোপূর্বে তুরস্কের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে অন্য কোনও একতরফা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া স্বীকার করে না। এটি তুরস্ক বা ভারত উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কানাডায় নতুন বছরে বিভিন্ন ইস্যুতে নতুন নীতিমালা
Next post দক্ষিণ আফ্রিকায় গুলিতে দাগনভূঞার যুবক নিহত
Close