আইনি, নৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সামর্থ্য হলে দেশের সব ভাস্কর্যই অপসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। তিনি বলেন, তাদের এই অবস্থান ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই তা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।
রোববার (২৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। কখনো কোনোভাবেই এমন একজন মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচরণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাস্কর্য স্থাপনের চেষ্টা করা হলে সামর্থ্যের মধ্যে এর বিরুদ্ধে তিনি বলেই যাবেন। তবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে জড়াবেন না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না যেটা হঠকারী হয় বা জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া বা এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি। আমি বলেছি, আদর্শিক জায়গা থেকে কোনো ভাস্কর্য রাখা হবে না।
তিনি বলেন, যখন থেকে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তখন থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, ভাস্কর্য যারই হোক, জিয়াউর রহমানের হোক অথবা অন্য যারই হোক, আমি ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে। সব ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, আমাদের আইনগতভাবে, নৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সামর্থ্য হলে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যসহ সব ভাস্কর্যই আমরা মুসলমানদের জনপদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ নেব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মামুনুল হক বলেন, কোরআন–সুন্নাহর আলোকে পূর্বসূরিদের অনুসৃত পথে স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ অর্জনের চেষ্টা চালানোই তার ব্রত। কোনো ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি তাদের নেই। একটি মহল ষড়যন্ত্র মূলকভাবে তাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে ঢাকার দোলাইর পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গন। স্বাভাবিকভাবেই ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেমসমাজ এর প্রতিবাদ করছেন।
সেই সূত্রে তিনিও ভাস্কর্য, তথা মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধাচরণ করে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু সুকৌশলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে।
মামুনুল হক বলেন, সারা পৃথিবীতে ধর্মীয় যতগুলো স্কুল অব থট রয়েছে, ভাস্কর্যের পক্ষে কোনো কথা বলার অবকাশ নেই। এ জন্য সবাই ভাস্কর্য-মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং বলবে। সেই জায়গা থেকে তিনিও বলছেন। এখানে অন্য সবাইকে উপেক্ষা করে শুধু তাকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সাব্যস্ত করে এবং কথার বিকৃতি ঘটিয়ে, মূল বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠনগুলোকে তার বিরুদ্ধে ময়দানে নামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
কারা ষড়যন্ত্রকারী, এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, যারা এ দেশে ইসলামকে এবং ইসলামি শক্তিগুলোকে দুর্বল করতে চায়, তারা প্রধানত এর পেছনে রয়েছে। আর তাদের সঙ্গে আলেমসমাজ থেকে বিচ্যুত কিছু ব্যক্তির জড়িত থাকার আলামত রয়েছে।
More Stories
‘মার্চ ফর গাজা’য় বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ পুনর্বহালের দাবি
গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ (ইসরাইল ব্যতীত) লেখাটি...
সরকারের একমাত্র কাজ শেখ হাসিনার বিচার করা: মৎস্য উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার বিচার এই মাটিতে এই সরকারের আমলেই হতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র কাজ যদি কিছু থাকে, সেটা হবে শেখ...
‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’
দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক...
ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য...
পুরোপুরি পুড়ে ছাই ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি হওয়া দুটি প্রতীকী মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে...
‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’তে আগুন
চারুকলায় নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ভাস্কর্যে আগুন দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করতে...