Read Time:7 Minute, 3 Second

বিশ্বের সবার চোখ এখন তার দিকে। স্পটলাইটে জো বাইডেন, যিনি হতে চলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

পায়ে পায়ে মার্কিন ক্ষমতার অলিন্দ হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বয়স্ক মার্কিন প্রেসিডেন্টই শুধু হবেন না তিনি, হবেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ভোটের অধিকারীও।

ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে হারানোর রেকর্ড মার্কিন দেশে খুব বেশি নেই। অতীতে মাত্র পাঁচজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পান নি। বাইডেন বহুল আলোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে তাকে ৬ষ্ঠ জনে পরিণত করতে চলেছেন।

বাইডেন জিততে চলেছেন এমন একটি পরিস্থিতে, যখন বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের তোপে পৃথিবীর শীর্ষ আক্রান্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাসিত হচ্ছিল একজন রগচটা ও ‘আনপ্রেডিকটেবল’ প্রেসিডেন্টের শাসনে। অর্থনীতি বিপন্ন, সামাজিক বিভাজন তীব্র আর সাংস্কৃতিক অবিশ্বাসের মেরুকরণ আক্রান্ত করেছিল বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিকে। একটি আশাবাদ ও আস্থার প্রতীক হয়ে তখনই ঘটলো জো বাইডেনোর নীরব উত্থান, যার জন্ম ১৯৪২ সালের ২০শে নভেম্বর পেনসিলভ্যানিয়ার স্ক্রানটনে।

তার প্রোফাইল আর দশজন সাধারণ মার্কিন নাগরিকের মতোই। চার ভাইবোনের সবার বড় তিনি। বড় হয়েছেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল ও ডেলাওয়ারে। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান, আইরিশ বংশোদ্ভূত রমণী।

শিক্ষাজীবনে ডেলাওয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়েন বাইডেন। তার রয়েছে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রিও। জো বাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীনই বিয়ে করেন নিলিয়া হান্টারকে ১৯৬৬ সালে। তাদের তিন সন্তান, জোসেফ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা।

ব্যক্তিগত যে তীব্র বেদনা বাইডেনের রয়েছে, তাহলো, বিয়ের মাত্র ৬ বছরের মাথায় ১৯৭২ সালে স্ত্রীকে হারানো। ক্রিসমাস ট্রি আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। দুর্ঘটনায় মারা যান তার মেয়ে নাওমিও। ২০১৫ সালে তার বড় ছেলের মৃত্যু হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। জীবনের একটি বড় সময় তিনি স্বজন হারানোর শোকে ডুবে ছিলেন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৭৩ সালে বাইডেন বিয়ে করেন জিল ট্রেসিকে। তাদের সংসারে রয়েছে এক মেয়ে, অ্যাশলে ব্লেজার।

পারিবারিক বিষাদ অতিক্রম করে অতি সন্তর্পণে রাজনীতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন বাইডেন। রাজনীতি তার মনে ও কাজে মিশেছিল যৌবনেই। শিক্ষাজীবনের শেষেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।

মাত্র ৩০ বছর বয়সে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর। ডেলাওয়ার থেকে মোট ছয়বার সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়নে পালন করেন দায়িত্ববান ভূমিকা।

২০০৭ সালে বারাক ওবামার সঙ্গে রানিং মেট হিসেবে রাজনীতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যান জো বাইডেন। তিনি ছিলেন বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ ছিল তারই। কিন্তু তখন সরে দাঁড়ান তিনি। হিলারি ক্লিনটন নির্বাচন করে হারেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে সেই নির্বাচনেই অবতীর্ণ হলেন বাইডেন একই প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং ট্রাম্পকে হারিয়ে করলেন বাজিমাৎ।

কেমন মানুষ বাইডেন, তা জানার জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্ব। বিশ্বের এক নম্বর দেশের এক নম্বর মানুষটির বিষয়ে জানার আগ্রহ স্বাভাবিক। ‘আমেরিকান স্বার্থের প্রতীক’ বলা হয় তাকে। বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাবার বিষয়টিকে অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তারই ওপর। ইরাক যুদ্ধেও বাইডেনের সমর্থন ছিল জোরালো। তবে তিনি পরে মার্কিন সেনাদের বিদেশে অবস্থানের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও ছিলেন তিনি। সর্বপরি, তিনি মার্কিন স্বার্থের একজন রক্ষক হবেন, তা বলাই বাহুল্য।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ট্রাম্পের দলে চরম গৃহবিবাদ
Next post যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন জয়ের খবরে বরিশালে ভূরিভোজ
Close