Read Time:6 Minute, 19 Second

সাধারণত, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিন নিশ্চিত হওয়া যায় কে পড়তে যাচ্ছেন জয়ের মালা। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জরিপ বলছিল হিলারি জিতবেন, কিন্তু জেতেন ট্রাম্প। সে কারণে এবারের নির্বাচনে দুই দলের ন্যাশনাল কনভেনশনের পর থেকেই যতগুলো জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোতেই বাইডেন এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেকেরই ধারণা ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। ২০১৬ আর ২০২০ যে এক নয় সে কথা অনেকেই মানবেন। এ বছরের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ। এই প্রকোপের প্রেক্ষিতে দুই প্রার্থীকে বেছে নিতে হয়েছিল দুই সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পথ। ট্রাম্প এর ভয়াবহতাকে অস্বীকার করে উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকতে চেয়েছেন আর বাইডেন বিজ্ঞানীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে করোনাভাইরাস মহামারি মুখ্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হচ্ছে।

মহামারির কারণে কাউন্টি, সিটি ও স্টেট নির্বাচন অফিসগুলো সম্মিলিতভাবে ডাকযোগে ও নিজে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আগাম ভোটদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই দুই সিদ্ধান্ত ভোটারদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। রোববার দুপুর পর্যন্ত পুরো আমেরিকায় আগাম ভোট পড়ে ৯ কোটি ১৬ লাখ ২ হাজার ৫০২টি। এর মধ্যে ডাকযোগে ভোট পড়েছে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ৬৮টি। আর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আগাম ভোট দিয়েছেন ৩ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৪৩৪টি। ২০১৬ সালে মোট প্রদত্ত ভোটের পাশে এই সংখ্যা প্রায় ৬৭ শতাংশ। রোববারেই আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। সন্ধ্যা নাগাদ এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

১ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ গৃহীত সর্বশেষ জরিপে ব্যাটেল গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত চারটি স্টেটেই ৩ থেকে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রার্থী জো বাইডেন। উইসকনসিনে ১১ পয়েন্ট, অ্যারিজোনা ও পেনসেলভেনিয়ায় ৬ পয়েন্ট করে এবং ফ্লোরিডায় ৩ পয়েন্ট। এনবিসি নিউজের সর্বশেষ জরিপে উপরোক্ত স্টেটগুলো ছাড়াও নর্থ ক্যারোলাইনায় বাইডেন এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে। এনবিসি নিউজের জাতীয় ভিত্তিক জরিপে জো বাইডেনের পক্ষে সমর্থনের তথ্য উঠে এসেছে। ট্রাম্পের ৪৫ শতাংশের পাশাপাশি বাইডেনের অবস্থান সুসংহত। তার পক্ষে সমর্থন রয়েছে ৫১ শতাংশের।

এ বছর হাউজের সবকটি, অর্থাৎ ৪৩৫ আসনেই নির্বাচন হচ্ছে। ২০১৮ সালের কংগ্রেশনাল নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৩৫টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ৩ নভেম্বর নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ৯ কংগ্রেস সদস্য পুননির্বাচন করছেন না আর রিপাবলিকান পার্টির ২৬ জন। কংগ্রেশনাল বিশেষজ্ঞদের ধারণা বেশিরভাগ আসনেই দলীয় প্রাধান্য থাকবে। তবে, ডেমোক্রেটিক পার্টির ৩ জন বর্তমান কংগ্রেস সদস্য আর ৫ জন রিপাবলিকান সদস্য প্রাইমারিতেই আসন খুইয়েছেন পুনর্বার নির্বাচিত হওয়ার জন্য। তবে ৩ নভেম্বর নির্বাচনে এই দলের একজন নতুন সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ায় জিতেছেন। হিসাব-নিকাশ করে বলা যায় হাউজে ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে।

তবে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ যে রিপাবলিকানরা হারাচ্ছে সে শঙ্কা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই প্রকাশ করেছেন। জরিপ অনুযায়ী যেসব রিপাবলিকান সিনেটর তাদের আসন হারাতে পারেন বলে প্রায় নিশ্চিত, তারা হলেন- মেইন স্টেটের সুজান কলিন্স, নর্থ ক্যারোলাইনায় থম টিলিস, অ্যারিজোনার মার্থা ম্যাকস্যানি এবং কলোরাডোর কোরি গার্ডনার। আর যারা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তারা হলেন- আইওয়ার রিপাবলিকান সিনেটর জোনি আর্নস্ট, জর্জিয়ার কেলি লোফনার, মনটানার স্টিভ ডেইন্স। তবে, সবচেয়ে বেশি চিন্তায় আছেন সাউথ ক্যারোলাইনায় হেভিওয়েট সিনেটর লিনজি গ্রাহাম। তাকে নাস্তানাবুদ করছেন ডেমোক্রেটিক চ্যালেঞ্জার জেইমি হ্যারিসন।

ওয়াশিংটন পোস্ট ভবিষ্যৎবাণী করেছে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প আমও হারাবেন ছালাও হারাবেন। অর্থাৎ, হোয়াইট হাউজ এবং সিনেট দুটোই হারাবেন তিনি। এর সত্যাসত্য দেখার জন্য আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটকেন্দ্রে আনতে মরিয়া বাইডেন-কমলা
Next post ‘এগিয়ে থাকার আভাস পেলেই নিজেকে জয়ী ঘোষণার পরিকল্পনা ট্রাম্পের’
Close