Read Time:6 Minute, 59 Second

করোনা মহামারি অবসানের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশিত বস্তুটি হলো কোভিড-১৯ এর একটি ভ্যাকসিন। সম্ভাব্য ভ্যাকসিনেরও অভাব নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এমন ৩৪টি ভ্যাকসিনের ওপর নজর রয়েছে তাদের। যদিও এসব ভ্যাকসিন কীভাবে এবং কতটা কাজ করবে এটা আরেকটা বড় ব্যাপার।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ভ্যাকসিনটির বৃহৎ পরিসরে মানবদেহে পরীক্ষা চালিয়ে কার্যকারিতা যাচাই করছে ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রজেনেকা। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের একজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় ৯ সেপ্টেম্বর গোটা পরীক্ষা কার্যকম স্থগিত করে কোম্পানিটি।

ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে এমনটাই স্বাভাবিক। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সব সময় ফল পাওয়ার আশা করা যায় না। বহুদিনের গবেষণা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের কেবল একটি অসম্পূর্ণ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। ১৯৮৭ সালে ভ্যাকসিনের প্রথম ট্রায়াল শুরুর পর এইচআইভির (এইডস) প্রাপ্তির খাতা তো এখনও শূন্য।

কোভিড-১৯ নিয়ে প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্রের ফলকে আশা জাগানিয়া ও উৎসাহব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছে প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। প্রথম গবেষণাটি করেছে আইসল্যান্ডের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ডিকোড জেনেটিক্সের একদল বিজ্ঞানী; যা ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে’ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণাপত্রে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা দেশটিতে মহামারি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে ওঠা ১ হাজার ২০০ রোগীর অ্যান্টিবডির স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের দেহে দুই বার অ্যান্টিবডির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথমবার সংক্রমণের পরপরই, দ্বিতীয় দফায় চার মাস পর।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা ছিল গুরুতর অর্থাৎ যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল— এমন রোগীদের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা ছিল অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। পুরুষ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে এ ফল পাওয়া যায়।

চার মাস অ্যান্টিবডি থাকার এ বিষয়টি দুই কারণে আনন্দের জানিয়ে ইকোনোমিস্ট লিখেছে, ফলে অ্যান্টিবডি যতদিন দেহে থাকছে ততদিন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই। অর্থাৎ আমাদের এমন একটি ভ্যাকসিনের প্রয়োজন যা অ্যান্টিবডি উৎপাদনকে প্ররোচিত করবে এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

অপর গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রিটেনের ‘দ্য মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের মহামারি বিশেষজ্ঞ তাও দং; যিনি রয়েছেন টি-সেলের খোঁজে। এটি অ্যান্টিবডির মতো অতটা আলোচিত না হলেও সংক্রমণ রোধে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিতে এটি অ্যান্টিবডির সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইচআইভিতে যা প্রমাণিত।

আশা জাগানিয়া দ্বিতীয় এই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচার ইমিউনোলোজি নামের একটি সাময়িকীতে। এই গবেষণায় মাঝারি ধরনের অসুস্থ ২৮ জন এবং গুরুতর অসুস্থ ১৪ জন কোভিড-১৯ রোগীর সঙ্গে সঙ্গে ১৬ জন সুস্থ দাতার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা।

গবেষণা নিবন্ধটিতে এর বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তিদের টি-সেল এর তীব্র প্রতিক্রিয়া তারা দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে মাঝারি পর্যায়ে অসুস্থ ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়ায় ভিন্নতা দেখা গেছে।

বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করে বলতে গেলে মাঝারি পর্যায়ে অসুস্থরা ছিলেন সিডি৮প্লাস সেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত; যা সংক্রমিত সেলগুলোকে সিডি৪প্লাসের (স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) তুলনায় সরাসরি ধ্বংস করে।

এমআরসির গবেষণা নিবন্ধে দেখা যাচ্ছে, মানবদেহের কোষে প্রবেশকারী স্পাইক প্রোটিনসহ ভাইরাসের আটটি পৃথক অংশ শনাক্ত করতে পারে টি-সেল। যা ভবিষ্যতে টিকার পরিশোধনে প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ ও বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আল এডওয়ার্ডস বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী। তবে তিনি সতর্কও বটে। তিনি বলেন, রোগের ক্ষেত্রে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা প্রত্যাশিভাবে কাজ করছে। এটা চলতে থাকলে ভ্যাকসিন দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

তবে এখনই এসব সুখবর নিয়ে উচ্ছসিত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে ইকোনমিস্ট। ইমিউনোলোজি বা রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যা পূর্বধারণামূলক বিজ্ঞান নয় এবং এ নিয়ে কোনো ভবিষদ্বাণী চলে না বলে মন্তব্য করেছেন ডা. এডওয়ার্ডস। এমন কোনো পরীক্ষা নেই যা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় হাঙ্গেরি
Next post কোনো দেশে আমাদের মতো পরিকল্পনা নেই : পরিকল্পনামন্ত্রী
Close