Read Time:8 Minute, 0 Second

করোনাভাইরাসের প্রকোপে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গোটা বিশ্ব। উন্নত থেকে দুর্গত, সব জনপদে লাশের সারি ফেলে চলেছে এই ভাইরাস। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশে দেশে যেন প্রতিযোগিতা চলছে। একদিন এক দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় তো, আরেকদিন আরেক দেশ ভাঙে সেই রেকর্ড। একদিন এক দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয় তো, আরেকদিন সেটা ছাপিয়ে যায় অন্য দেশ। করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশগুলোকে এই প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুসারে, সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে বাংলাদেশ।

৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর শুরুর দিকে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম থাকলেও মে মাসের শেষ এবং জুনের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফি বাড়ছে উভয় সংখ্যা। গত তিনদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ত্রিশের নিচে নামেইনি। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজারের কম-বেশিই দেখা গেছে। এতো বিপুল সংখ্যক লোকের সংক্রমণ ও মৃত্যুই ওয়ার্ল্ডোমিটারের গ্রাফে শীর্ষ ২০-এ ঢুকিয়েছে বাংলাদেশকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবারের (৫ জুন) সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯১। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮২৮ জন। মারা গেছেন মোট ৮১১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৮০৪ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের শুক্রবারের গ্রাফে এই চিত্রটিই তুলে ধরা হয়েছে।

ওয়েবসাইটটির তথ্যমতে, সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে তিন লাখ ৯৩ হাজারের বেশি। আর সুস্থ হয়েছেন প্রায় পৌনে ৩৩ লাখ রোগী।

এর মধ্যে করোনা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। সেখানে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সোয়া ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে নতুন করে (সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য) আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ২১৬ জন। দেশটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন। নতুন করে মারা গেছেন ৪৫ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর সংক্রমণের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ৮১ হাজার। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৮৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের।

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ প্রায়। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে নয় হাজার মানুষ। সংক্রমণের তুলনায় রাশিয়ায় অবশ্য মৃত্যু কমই হয়েছে বলা যায়। সেখানে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৮ জনের। এর মধ্যে নতুন করে মারা গেছেন ১৪৪ জন।

এর তালিকার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে আছে যথাক্রমে স্পেন, যুক্তরাজ্য ও ইতালি। করোনা একসময় এই তিন দেশকে সবচেয়ে বেশি নাস্তানাবুদ করেছে। পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তির তিন দেশেই। স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭৪০। মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১৩৩ জনের। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ জন। মৃত্যুর দিক থেকে যুক্তরাজ্যই দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০৪ জনের। আর ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৩৪ হাজার ১৩। মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৬৮৯ জন।

প্রতিবেশী ভারত সংক্রমণের তালিকায় উঠে এসেছে সপ্তম স্থানে। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত দুই লাখ ২৭ হাজার ২৭৩। মারা গেছেন ছয় হাজার ৬৩৭। ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে, যা চিন্তিত করছে দেশটির বিশেষজ্ঞদের।

এরপর অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে আছে যথাক্রমে জার্মানি, পেরু ও তুরস্ক। দেশ তিনটিতে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে এক লাখ ৮৫ হাজার, এক লাখ ১৮৩ হাজার, এক লাখ ১৬৭ হাজার। মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে আট হাজার ৭৩৬, পাঁচ হাজার ৩১ এবং চার হাজার ৬৩০।

তালিকার ১১তম থেকে ১৯তম পর্যন্ত আছে ইরান (আক্রান্ত এক লাখ ৬৭ হাজার, মৃত আট হাজার ১৩৪), ফ্রান্স (আক্রান্ত এক লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪, মৃত ২৯ হাজার ৬৫), চিলি (আক্রান্ত এক লাখ ১৮ হাজার ২৯২, মৃত এক হাজার ৩৫৬), মেক্সিকো (আক্রান্ত এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮০, মৃত ১২ হাজার ৫৪৫), সৌদি আরব, (আক্রান্ত ৯৫ হাজার ৭৪৮, মৃত ৬৪২), কানাডা (আক্রান্ত ৯৩ হাজার ৭২৬, মৃত সাত হাজার ৬৩৭), পাকিস্তান (আক্রান্ত ৮৯ হাজার ২৪৯, মৃত এক হাজার ৮৩৮), চীন (আক্রান্ত ৮৩ হাজার ২৭, মৃত চার হাজার ৬৩৪) এবং কাতার (আক্রান্ত ৬৫ হাজার ৪৯৫, মৃত ৪৯)।

৬০ হাজারের বেশি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে তালিকায় শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাফের আরও উপরে উঠে যাওয়ার শঙ্কা স্পষ্ট। জুন শেষে তালিকায় বাংলাদেশ গ্রাফের কোন জায়গায় গিয়ে অবস্থান নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত দাউদ ইব্রাহিম
Next post সুফিবাদই পাল্টে দিয়েছে এআর রহমানের জীবন
Close