Read Time:5 Minute, 27 Second

করোনাভাইরাস নিরাময়ে অনেক দেশ ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ) ব্যবহারের অনুমতি দিলেও কার্যত তাতে কোনো উপকার হয় না, বরং এতে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় বলে নতুন দুটি গবেষণায় দেখা গেছে।

এইচসিকিউ কভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে কি-না এ নিয়ে ফ্রান্স ও চীনে শুক্রবার প্রকাশ করা দুটি গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে হতাশাজনক খবর জানাল বার্তা সংস্থা এএফপি।

চলমান করোনা সংকট মোকাবিলায় এইচসিকিউ’তে আশা দেখছিল অনেক দেশ। প্রাথমিক কিছু গবেষণায় দেখা যায়, ম্যালেরিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধটি কভিড-১৯ রোগীদের বেলায়ও কাজে দেয়। প্রদাহ-নিরোধক ওষুধটিকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এইচসিকিউ’র অন্যতম উৎপাদক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকের কাছে ভারতের কদর বাড়তেও দেখা যায়। রাজনৈতিক চাল হিসেবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশকে উপঢৌকন হিসেবেও পাঠাতে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি সরকার।

এর মধ্যেই এইচসিকিউ’র কার্যকারিতাকে বড় প্রশ্নে ফেলে দিল শুক্রবার প্রকাশিত দুটি গবেষণার ফল। ফ্রান্স গবেষকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা ১৮১ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, যারা কভিড-১৯ সংক্রান্ত নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং তাদের অক্সিজেন সাপোর্টের দরকার হয়েছিল।

এর মধ্যে এইচসিকিউ প্রয়োগসহ চিকিৎসা দেওয়া হয় ৮৪ জন করোনা রোগীকে। বাকি ৯৭ করোনা রোগীর চিকিৎসা চলে এইচসিকিউ প্রয়োগ ছাড়া। তাতে দল দুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। উভয়দেরই নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিতে হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে অথবা ১০ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে।

বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেছেন, “ছোট ছোট গবেষণাগুলোর ওপর ভিত্তি করে কভিড-১৯ চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। কিন্তু কভিড-১৯ নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের অক্সিজেনের দরকার পরে তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের প্রয়োগ এই গবেষণা সমর্থন করে না।”

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তথা এইচসিকিউ নিয়ে চীনে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকেরা ১৫০ কভিড-১৯ রোগীকে দুই গ্রুপে ভাগ করে তাদের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি গ্রুপে এইচসিকিউ প্রয়োগ করা হয়; অন্য গ্রুপের চিকিৎসা চলে এইচসিকিউ প্রয়োগ ছাড়া।

চার সপ্তাহ পর দেখা যায়, উভয় গ্রুপের মধ্যেই করোনা সংক্রমণের মাত্রা একইরকম। বরং যারা এইচসিকিউ গ্রহণ করা গ্রুপের রোগীদের মধ্যে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ বহু বছর ধরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্বকের প্রদাহজনিত কিছু রোগ ও বাতের চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার আছে। কিন্তু গুজবের মতোই হঠাৎ করে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই ওষুধ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায়ও কাজে দেয়।

গত মাসে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি সতর্ক করে যে, কভিড-১৯ চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কাজে দেয় এমন কোনো প্রমাণ নেই। বরং কিছু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই ওষুধ প্রয়োগে রোগীর হৃদ্‌যন্ত্রের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের সূত্রপাতের পর বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করতে খুব সময় লাগেনি। এর মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ দাঁড়ালেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন বা চিকিৎসার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post করোনা এক দেহে দুইবার ‘সক্রিয় হওয়া কঠিন’
Next post বাংলাদেশে করোনায় নতুন রেকর্ড
Close