দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাল্যবিবাহ হয়েছে ৩৩টি। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
৬ মে, বুধবার, ‘বাংলাদেশে লকডাউন পরিস্থিতিতে নারী নির্যাতন’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
২৪ টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে ২৭ জেলার ৫৮ উপজেলার ৬০২টি গ্রাম ও ৪ টি সিটি কর্পোরেশনের ১৭ হাজার ২০৩ জন নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮ নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার দুই হাজার আট, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩০৮ জন নারী। এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার জন নারী, হত্যা করা হয়েছে এক জনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ জন নারীকে।
উত্তরদাতা চার হাজার ২৪৯ শিশুর মধ্যে ৪২৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ে হয়েছে ৩৩ টি এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪২ টি। চারটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৬ জনকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহৃত হয়েছে দুই জন, যৌন হয়রানির শিকার ১০ জন এবং ত্রাণ নেয়ার সময় ১০ টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ টি শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। আর নারীরা বেশির ভাগই স্বামীর হাতে।
সংবাদ সম্মেলনে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম জানান, এ তথ্যগুলো এখনো বিশ্লেষণ করা হয়নি। তাই লকডাউনের কারণেই পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সেটি এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে ১৬৭২ নারী লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইউএনএফপিএ পরিচালিত বৈশ্বিক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বব্যাপী গৃহ নির্যাতন ২০ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধতার মাঝে কেবল কয়েকটি জেলায় জরিপটি চালানো হলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নির্যাতনের চিত্রও একইরকম বলে মনে করে এমজেএফ। আগামী মাসেও এই ধরনের জরিপ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন শাহীন আনাম।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছুটির মধ্যে খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য কর্মসূচির মতো পারিবারিক সহিংসতা বন্ধের ব্যাপারেও সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি গৃহ নির্যাতন রোধে কার্যক্রম বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও ছুটির মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হটলাইন ১০৯ ও পুলিশি সহায়তার জন্য ৯৯৯ আরও বেশি কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছেন বক্তারা। পাশাপাশি, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা যাতে আশ্রয় পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা, করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল চলমান রাখার জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ দ্রুত পাশ করার পরামর্শও জানানো হয়েছে।
More Stories
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন লুৎফুজ্জামান বাবর
চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের আরেক মামলাতেও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান...
শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রদানের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রতি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রদান করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী...
আবারও বাংলাদেশকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর
বাংলাদেশে কিছুই নেই। পুরো দেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল। ওই দেশে দরিদ্র মানুষ এতো বেশি যার কিছু দরিদ্র এখানে (ভারতে) পাঠানো...
শেখ হাসিনার এপিএস লিকুর ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, ৪ মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব–২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর নামে পৃথক ৪ টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন...
‘তেল মারা’ বন্ধ করুন: সরকারি কর্মকর্তাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সরকারি কর্মকর্তাদের ‘তেল মারা’ বন্ধ করতে হবে—এমন মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, “ভবিষ্যতে যারা...
চলতি বছরেই নির্বাচন জরুরি, ইইউকে খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি...