>> ২১ জানুয়ারি থেকে বিদেশফেরত যাত্রীর সংখ্যা ৫ লাখ ৮১ হাজার ১১৫
>> ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ফিরেছে ৪ লাখ ৪৮৭ হাজার ৯০৯
>> বিদেশফেরত যাত্রীদের অনেকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না
>> বিমানবন্দরে জোরদার থাকলেও স্থলবন্দরগুলোতে নজরদারি ছিল কম
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান প্রদেশে নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পর মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগটি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ২১ জানুয়ারি থেকে হযরত শাহজালালসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপাসহ আগাম সতর্কতামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বেনাপোলসহ সকল স্থলবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন দিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের থার্মাল ও হ্যান্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে জ্বর মাপাসহ হেলথ স্ক্রিনিং, হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণসহ নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখাসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিদেশি দাতা সংস্থার মাধ্যমে দেশেই পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হচ্ছে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রোগতত্ত্ববিদদের পরামর্শে করোনামুক্ত থাকতে কী কী করতে হবে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো ইতালি ফেরত দুই বাংলাদেশি এবং তাদের একজনের সংস্পর্শে আসা এক নারীর লালার নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। পরবর্তীতে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাদের একজন বাড়িও ফিরে গেছেন। আরেকজন সুস্থ হয়ে উঠলেও ব্যক্তিগত কারণে আপাতত হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
দেশে মাত্র তিন রোগী শনাক্ত হলেও স্বস্তি নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটই এর মূল কারণ। বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির সংক্রমণে (কোভিড-১৯) মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৮০ জন। আক্রান্তের ঘটনা এক লাখ ৩৮ হাজার ১৫২টি। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ হাজার ৭১৪ জন সুস্থ হয়েছেন। প্রকাশ্যে না বললেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও উদ্বিগ্ন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তারা প্রায় দুই মাস আগে থেকে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু বিদেশফেরত যাত্রীদের ঢল ঠেকাতে পারেননি। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে এসব যাত্রীই মুখ্য ভূমিকা রাখবেন— এটাই তাদের মধ্যে বড় আতঙ্কের কারণ।
তারা বলেন, করোনাভাইরাসের সুপ্তকাল দুই থেকে ১৪ দিন। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড ইনফ্রারেড মেশিনে জ্বর মাপা হলেও অধিকাংশ যাত্রীর তাৎক্ষণিকভাবে জ্বর ধরা না পরাটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সেলফ কোয়ারেন্টাইন ইজ দি বেস্ট ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু আমরা যত দূর জেনেছি, বিদেশফেরত যাত্রীরা তা মানছেন না। তাদের অনেকেই গণপরিবহনে চড়ছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। এতে ঝুঁকি বাড়ছে।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ (১৩ মার্চ) পর্যন্ত দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোলসহ সকল স্থলবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন দিয়ে করোনা আক্রান্তসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সর্বমোট পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ১১৫ জন নাগরিক (দেশি-বিদেশি) দেশে ফিরেছেন।

গত এক মাসে (১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত) এ সংখ্যা চার লাখ ৪৭ হাজার ৯০৯ জন। আর গত ১৫ দিনে বাংলাদেশে এসেছেন দুই লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়েই বেশি এসেছেন। তিনটি বন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেভাবে নজরদারি করা হয়েছে অন্য কোথাও সেভাবে করা হয়নি।
গত ১৫ দিনে বিদেশফেরত দুই লাখ ১৪ হাজার যাত্রীর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কি-না, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদেশফেরত বিশেষ করে আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি তো রয়েছেই। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস রোগটি উচ্চমাত্রার ছোঁয়াচে হলেও এতে মৃত্যুঝুঁকি কম। বয়োবৃদ্ধ কিংবা বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে আগে থেকে আক্রান্ত বয়স্কদের এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে- মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, বিদেশফেরত যাত্রীরা দুই সপ্তাহ ঘরে নির্বাসনে থাকলে তার পরিবার, দেশ ও জাতি বেঁচে যাবে। বারবার বলার পরও বিদেশফেরত যাত্রীরা নিজ গৃহে নির্বাসনে না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাদের (বিদেশফেরত) ঘরে রাখার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি এবং আইনের ভয়ও দেখাতে হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে দেশবাসীকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আক্রান্ত হলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে- জানান তিনি।
More Stories
সৌদিতে সাত দিনে ২২ হাজারের বেশি অভিবাসী আটক
সৌদি আরবে আবাসন ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলা অভিযানে এক সপ্তাহে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটি।...
ওমরাহতে যাওয়ার আগে রিটার্ন টিকিট বাধ্যতামূলক করলো সৌদি
এখন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে রিটার্ন টিকিট কাটতে হবে ও যাত্রার সময় চেক-ইন কাউন্টারে ফিরতি টিকিট দেখানো বাধ্যতামূলক...
হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে যা বললেন ভলকার তুর্ক
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা...
হাসিনার দশা হলো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের
আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি রেডিও আরএফআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল...
বিজ্ঞানের ‘সমতার শক্তিতে’ ফিলিস্তিনি শরণার্থী থেকে নোবেল জয়
জর্দানে ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারের সন্তান হিসেবে একদমই সাধারণ পরিবেশে জন্ম নেওয়া রসায়নে নোবেল বিজয়ী ওমর এম ইয়াগি বুধবার বিজ্ঞানের ‘সমতার...
স্ত্রীর চিৎকারে ভেবেছিলেন ভালুক, পরে শোনেন নোবেল জিতেছেন
মন্টানার রকি পর্বতমালায় ক্যাম্পিং ও হাইকিং করছিলেন প্রফেসর ফ্রেড র্যামসডেল। হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকার শুনে ভাবেন, হয়তো ভালুক এসেছে। কিন্তু পরে...
