কাজী মশহুরুল হুদা :
আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যে দূর্নীতির প্রভাব লুপ্ত প্রায়। তার কতগুলো কারণ আছে। আমি আমেরিকার কথা দিয়েই শুরু করতে চাই। এদেশে যে কোন জনপ্রতিনিধিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে তাদেরকে প্রথমত: তিনটি কোর্সের ট্রেনিং নিতে হয়। তা তৃণমূল থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সকলকে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সিটি পর্যায় থেকে, স্টেস্টও ফেডারেল পর্যায়ের যে কোন জনপ্রতিনিধিকে নীতিশাস্ত্র (এথিকস), আচরণ বিধি (কোড অব কন্ডারস) এবং তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। ট্রেনিং শেষে পরিক্ষা হয় যা ৭০-৮০% নাম্বার অর্জন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়।
নীতি শাস্ত্রে এই সকল জনপ্রিতিনিধিদেরকে তাদের নিয়মাবলী মেনে নিতে হবে। অন্যথায়, শাস্তির বিধান রয়েছে। সর্বপরি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। যেমন কেউ নির্দিষ্ট পরিমানের অতিরিক্ত উপঢৌকন বা উপহার গ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি ট্রান্সপোটেশনের টিকিট এবং হোটেলের খরচও না। এটাই গিফটের মধ্যে পড়ে। জনপ্রিতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের উর্দ্ধে কোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। প্লেনের আপ গ্রেড ও তার মধ্যে পড়ে। এত সব কিছু নীতিমালা তাদের মেনে চলতে হয়। অর্থায়নের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি আইন রয়েছে।
বোর্ড মেম্বারদের ভোটাভুটির মাধ্যমে অনুমোদন ছাড়া রাজকোষের কোন অর্থ ব্যায় করতে পারবে না। যদি করে তা নিজ পকেট থেকে পূরণ করে দিতে হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোন প্রকল্পের ক্ষেত্রে যদি ব্যাক্তিস্বার্থ জড়িত থাকে বা আত্মীয় স্বজনের সূত্র থাকে তাহলে বিল পাশের ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি ভোটাভুটির সময় অধিবেশনে অবস্থান পর্যন্ত করতে পারবে না। অন্যথায় জেল জরিমানা এমনকি পদত্যাগেরও মানহানির প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।
আচরণ বিধির ক্ষেত্রে কোন জনপ্রতিনিধি হয়রানি বা বুলি আচরণ করতে পারবেনা। সকল নিয়মাবলি অমান্যকারীদের প্রতি কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। ফলে এখানকার জনপ্রতিনিধিবৃন্দ দেশের দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে তিনটি বিষয়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং তাদেরকে সেই মোতাবেক অফিস পরিচালনা করতে হয়। যার কারণে তাদের নিয়মের বাইরে বেরিয়ে দায়িত্ব পালন করার অবকাশ থাকে না এবং তারা প্রত্যেকেই সেই মোতাবেক চলে।
যেখানে জনপ্রতিনিধি দুর্নীতি বা ঘুষ খেতে পারে না বা সুযোগ থাকেনা। সেখানে অধিনস্থ কর্মচারিবৃন্দ খাওয়ার সুযোগ বা প্রশ্নই থাকে না। এদেশে কোন কর্মচারীকে যদি ব্যাক্তিস্বার্থে কাউকে ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব করে তাহলে উক্ত কর্মচারীই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে ব্যাক্তিকে জেলে পাঠিয়ে দেয়। না হলে উক্ত কর্মচরীরই জেলে যেতে হতে পারে ঘটনা গোপন করার জন্য। এই পদ্ধতিগত নিয়মতান্ত্রিকতার দুর্নীতির প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের তৃতীয় বিশ্বে যদি জনপ্রতিনিধিদের উপর উপরোক্ত নিয়মকানুন বলবৎ করা যায় তাহলে হয়তো দূর্নীতির প্রভাব মুক্ত হতে পারত বা পারে। জনপ্রতিনিধি যদি কোন প্রকার দূর্নীতির সুযোগ না থাকে তাহলে অধীনস্থ কর্মচারীবৃন্দ দূর্নীতিপরায়ন হতে পরে না। জনপ্রতিনিধিই দূর্নীতির মূল উৎস।
More Stories
আমেরিকায় বাঙ্গালী নারীদের অগ্রগতি
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি। কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে যেমন চিকিৎসক, স্হপতি, বৈমানিক, শিক্ষক ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের...
কমিউনিটির উন্নয়নে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকা বাঞ্চনীয়
কাজী মশহুরুল হুদা : আমার অভিজ্ঞতায় এবং বিশ্লেষণে দেখেছি দেশের জন্য, জাতির জন্য, দেশাত্মবোধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে যারা কাজ করেন...
‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’
কাজী মশহুরুল হুদা : ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে’। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীন বাংলা...
সম্পাদকীয় : ক্যালিফোর্নিয়া আ’লীগের ঐক্যের প্রক্রিয়া কোন পথে?
কাজী মশহুরুল হুদা : লস এঞ্জেলেস আওয়ামী পরিবারের দীর্ঘ প্রত্যাশিত রাজনৈতিক বিভবাজন সমাধানের সংলাপ অনুষ্ঠিত হল গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০...
২০২০’র একুশের ভাবনা
কাজী মশহুরুল হুদা : একুশ নিয়ে আমাদের চিন্তা চেতনায় অনেকেই পিছিয়ে আছি। আমরা ভাবছি একুশ কি উদযাপন হবে নাকি পালিত...
লস এঞ্জেলেসের নেতা সমাচার
কাজী মশহুরুল হুদা : লস এঞ্জেলেসে কোন নেতা নেই। যা আছে তা হচ্ছে- তথাকথিত নেতা অর্থাৎ স্বঘোষিত। এই সব কথিত...