দেখতে দেখতে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল ক্যালিফোর্নিয়া বি এন পি’র দুই অংশকে এক করে দিয়ে গেছেন বি এন পি’র কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম। ২০ শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার গুরু দ্বায়িত্ব অর্পণ হয়েছিল নিয়াজ মুহাইমেন, মুর্শেদুল ইসলাম, এম ওয়াহিদ রহমান, ও আব্দুল বাসিত এর উপর। এই দুই অংশের নেতা-কর্মী ছাড়িয়ে লিটিল বাংলাদেশের চায়ের টেবিলের আড্ডায় ঝড় তুলছে কারা হচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়া বি এন পি’র নুতন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের কাছে তাদের সর্বশেষ অবস্থান জানতে চেয়েছিলাম। অনেকেই প্রথম প্রথম মুখ না খুললেও আলাপচারিতায় বেরিয়ে আসে অনেক না জানা কথা। গেল ১৭ই ফেব্রুয়ারীতে বাফলা অফিসে দেখা একপক্ষের সহসভাপতি মুর্শেদুল ইসলামের সাথে। তাকে নিয়েই দুই পক্ষের মাঝে অচলাবস্থা উল্লেখ করে সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হবে, আমাকে সম্মানের সাথে বললে আমি আমার অবস্থান থেকে সরে আসবো তবে আমার সাথে সাথে অপরপক্ষের সভাপতি শামসুজ্জোহা বাবলুকেও সরে যেতে হবে। আমি দেশ থেকে বি এন পি করে এসেছি, আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরানো যাবে না।’
ওপর পক্ষের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ রহমান টেলিফোনে জানান, ‘আলোচনা হয়েছে, কিছু অগ্রগতি হয়েছে, আরো হবে।’ এই অগ্রগতির বিষয়বস্তূ অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এলো, তার সারাংশ নিম্নরূপ- ২৪শে জানুয়ারী কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের সভার পর থেকেই ওয়াহিদ যোগাযোগ করলে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বাসিত ও মুর্শেদ সময় ক্ষেপন করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৬ই ফেব্রুয়ারী শনিবার রাত ১০ ঘটিকায় শুরু হয়ে রাত দেড় ঘটিকা পর্যন্ত দুই পক্ষের মাঝে সভা হয়। সভার শুরুতে মূল আলোচনা আটকে যায় ২০১৬ সালে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার বিতর্ক নিয়ে। ওয়াহিদ বলেন, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ছিল এক তরফা, আমিসহ অনেককেই না জানিয়ে কমিটি গঠনের জন্য কমিটি নির্বাচিত করা হয়। ১৬ই ডিসেম্বরের সভায় আমিসহ উপস্থিত অনেকেই এমন কোনো প্রক্রিয়া দেখিনি। যদিও মুর্শেদ জোর দিয়ে বলেন, সেদিন তা করা হয়। মুর্শেদ আরো বলেন, আমাকে ভালোভাবে বললে আমি আমার অবস্থান থেকে সরে যেতাম, কিন্তু সভা করে পরিকল্পনামাফিক আমাকে আমার পদ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা হয়েছিল তাই আমি সরিনি। নুতন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার প্রস্তাবনা চাইলে, মুর্শেদ বলেন, “একজনকে আহবায়ক আর সবাইকে সদস্য করে একটা আহবায়ক কমিটি হতে পারে, কিংবা ২০১৬ সালের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়া যেতে পারে। যেহেতু আমার পদ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল আমি সরে যাব।” নিজেকে সভাপতি রেখে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়ে বাসিত বলেন, “যদিও নিজেকে সভাপতির প্রস্তাবনা ভালো দেখায় না তবুও আমাকে সভাপতি করে নিয়াজ ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কমিটি করা হউক। কিংবা ২০১২ সালের কমিটিতে ফিরে যাওয়া হউক।” মুর্শেদ বলেন, “২০১২ সালের কমিটি সর্বশেষ স্বীকৃত কমিটি, সেই কমিটিতে ফিরে যাওয়া যাক। আমরা নিয়াজ ভাইয়ের সাথে আগেও কাজ করেছি তাকে সাধারণ সম্পাদক পেলে কাজ করা সম্ভব।” উত্তরে নিয়াজ বলেন, “এটা ২০১৯ সাল, আপনারা হয়তো ২০১২ সালে আটকে আছেন, এখন আর ৭ বছর আগের কমিটিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব না।” তিনি ৮ই ফেব্রুয়ারী ম্যাডামের গ্রেফতারের পর আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করে পদায়নের প্রস্তাবনা দেন। ওয়াহিদ বলেন, “যেহেতু দুটি পক্ষ রয়েছে, এক পক্ষ সভাপতি পাবে এবং অপরপক্ষ সাধারণ সম্পাদক।” এর সাথে নিয়াজ যোগ করেন, যারা সভাপতি পাবে তারা ১ম যুগ্ম সম্পাদক, আর সাধারণ সম্পাদক পক্ষ ১ম সহসভাপতি। বাকি পদগুলো দুই পক্ষ ক্রমানুসারে ভাগ করে নেবে। বাসিত এখানে বাঁধ সেধে বলেন, “তাহলেতো পূর্বের কমিটির তিন নম্বর সহসভাপতি শাহীন ভাই এই কমিটির ৭ নম্বর সহসভাপতি হবেন।” যদিও রাত ১টা ৪০মিঃ এ সভা মুলতবি করার সময় মাহবুবুর রহমান শাহীনের নাম সভাপতি পদের সর্বশেষ প্রস্তাবনা ছিল। আরও: পূর্বের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ঘেটে জানা যায়, ২০১২ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছিলেন আব্দুল বাসিত ও সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মুহাইমেন। তখনও মুশফিক চৌধুরী খসরুর নেতৃত্বে একটি অংশ কমিটির বাইরে থেকে যায়। কমিটি গঠনের পর পরই কিছুটা চেষ্টা হয়েছিল তাদেরকেও সাথে নেওয়ার, বাসিত-মুর্শেদের বাধায় তা বাস্তবতায় রূপ পায়নি। এই অংশটিও একটি কমিটি ঘোষণা করে তাদের স্বকীয় অবস্থান জানান দিতে থাকে। ২০১২ সালের কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যায় ২০১৪ সালেই। কিন্তু নুতন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তারও দুবছর পরে ২০১৬ সালে। সভায় উপস্থিত সকলের মাঝে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম জানতে চাওয়া হয়। সামসুজ্জোহা বাবলু ও মুর্শেদুল ইসলাম দুজনেই বলেন আব্দুল বাসিত সরে দাঁড়ালে তারা সভাপতি পদের প্রার্থী। সভাপতি তার পদে থেকে যাবেন বললেও সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মুহাইমেন পদ ছেড়ে দিয়ে নুতনদের সুযোগ করে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ পর্যায়ে বদরুল চৌধুরী শিপলু, এম ওয়াহিদ রহমান, শাহাদাত হোসেন শাহীন ও আলমগীর হোসেন সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। সেদিনই সাধারণ সম্পাদক পদে সুরাহা হলেও সভাপতি সরে না দাঁড়ালে সিনিয়র সভাপতি পদে দুজনের প্রতিযোগিতায় চাপের সৃষ্টি হয়। যদিও এই প্রক্রিয়া নিয়ে পরে ওয়াহিদ প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন তিনি পরিস্থিতির শিকার। এক পর্যায়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া প্রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত থাকে। এতগুলো দিনে সভাপতি সরে গিয়ে দুজনকেই কমিটিতে স্থান করে দিতে বিভিন্ন প্রস্তাব ভিন্ন ভিন্নজনের কাছে আসে। যা কানে না তুলে ছয় মাস পরের এক সভায় মুর্শেদকেই আবারো সিনিয়র সভাপতি নির্বাচিত করা হলে বাবলুর সমর্থক কয়েকজন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে লস এঞ্জেলেসে বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় নেতাকর্মীর সমন্বয়ে একটি নুতন বি এন পি’র দেখা মিলে। অল্প দিনেই তারা অনুষ্ঠানগুলোতে প্রচুর জনসমাগমের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতার জানান দিতে থাকে। ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারীতে তাদের নেত্রী কারাবন্দি হলে এই অংশের মুহুর্মূহ আন্দোলন কর্মসূচিতে ওপর অংশের ঘরোয়া
যাই হোক শেষ পর্যন্ত তারা আজ এক হয়েছেন। কারা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে আসছেন, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। দীর্ঘ এই দুবছরেও ঐক্য প্রক্রিয়া দোলাচলে দুলেছে আগের সভাপতি পদ ছেড়ে সরে না দাঁড়ানোয়। এতো কিছুর পরও অনেকেই সংশয়ে সেই সভাপতি পদ না ছাড়লে ঐক্য প্রক্রিয়ার পরিণতি কি হবে?
সর্বশেষ: সময় ক্ষেপন করে ২০শে ফেব্রুয়ারীর মাঝে নুতন কমিটির গঠন অসম্ভব করে তোলা এবং কেন্দ্রীয় নেতার দেওয়া প্রস্তাবনা মেনে এক পক্ষ ভগ্নাংশ নিয়ে একুশে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও ওপর পক্ষের আংশিক অংশগ্রহণ এই ঐক্য প্রক্রিয়াকেই হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে বলে জানা গেছে।
More Stories
চাঁদের নিচে ‘তারা’, ফেসবুকে ছবি ভাইরাল
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। গতকাল বৃহস্পতিবার খালি চোখে অধিকাংশ মানুষই চাঁদ দেখতে পারেননি। তবে আজ শুক্রবার খালি...
আমাদের প্রাণের পদ্মা সেতু
কাজী মোশাররফ হোসেন ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায় এই আমার...
অবশেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর মনের আশা পূরণ
গত ১৯ নভেম্বর ২০২০, ৭০তম সভায় আমার গেজেট করণের দাবি চূড়ান্ত ভাবে অনুমোদিত হয়েছে। বিজয়ের মাসে এ এক দারুণ বিজয়।...
কেন এতো ধর্ষণ বাংলাদেশে?
ফিরোজ মাহবুব কামাল জ্বর কখনোই কোন সুস্থ্য দেহে আসে না। শরীরের উচ্চ তাপমাত্রাই বলে দেয় দেহে ম্যালেরিয়া, নিউমনিয়া, টাইফয়েড, কভিড...
সভ্য দেশে অসভ্যদের বসবাস : ভালো কাজেও বাহাত দেয়ার মানুষ আছে কমিউনিটিতে
কাজী মশহুরুল হুদা সভ্য দেশে বসবাস করেও ভালো কাজে বাহাত দেওয়ার মানুষ এই কমিউনিটিতে রয়েছে। আমি সম্প্রতিক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র...
বিতর্কে দুই ভাইস-প্রেসিডেন্ট
আনোয়ারুল মুকুল এবার মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্স এবং তাঁর ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হওয়া ভাইস-প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট ১২ ফিট ব্যবধান...