Read Time:49 Minute, 37 Second

কাজী মশহুরুল হুদা :
এক যুগের ইতিহাস :

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা বা অস্বীকার কারার কোন উপায় নেই যে, ডা: মাহবুব খান বাফলার প্রাণ পুরুষ। তিনিই সর্ব প্রথম বাফলার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ডা: মাহবুব খান স্যানহোস থেকে লস এঞ্জেলেসে বসবাসের জন্য এসেছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাফলা তৈরির জন্য স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ জন্য তিনি বিভিন্ন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পৃথক পৃথক ভাবে তার পরিকল্পনার কথা ব্যাক্ত করেন। প্রায় দুই বছর তিনি এই প্রক্রিয়া চালান অর্থাৎ ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এই বিগত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি নেতৃবৃন্দদের কাছ থেকে হতাশা ব্যাঞ্জক উক্তিই পান। যেমন-

১) লস এঞ্জেলেস বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ইউনিটি ফেডারেশন কথা অসম্ভব, 

২) অবসম্ভব প্রস্তাব, কারণ- একটি প্লেটে একাধিক ব্যাঙ রাখলে তা লম্প-ঝম্প মারবে এবং অচিরেই প্লেট খালি হয়ে যাবে। 

৩) অনেকেই বলেছেন যে ‘আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- এই কমিউনিটির বহু নেতৃবৃন্দের অনেক খারাপ কার্যক্রম দেখেছি, তারা কখনওই পরিবর্তন হবে না, অতএব এদের সাথে সময় নষ্ট করতে চাই না। তার চেয়ে পরিবার, চাকরি অথবা ব্যাবসায় সময় দেওয়া উত্তম মনে করি। 

৪) অনেকে বলেছেন- আমারা দীর্ঘকাল এই শহরে অবস্থান করি। আমরা জানি কিভাবে লস এঞ্জেলেস কমিউনিটিকে পরিচালিত করা যায়। আমরা কেনো এই ব্যাক্তির কথামত কাজ করব। যে কিছু দিন  হলো এখানে এসেছে। জানেই না কিভাবে কমিউনিটিকে পরিচালিত করতে হয়। বরং তার উচিত ফেরৎ যাওয়া, যেখান থেকে এসেছে। 

৫) অনেকেই বলেছেন- তার নিশ্চই কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।  আয়ের পথ খুঁজছে বা নেতা হওয়ার পরিকল্পনা করছে। অথবা কোন ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্য নিহিত আছে।  

৬) অনেকে এও বলেছেন- লস এঞ্জেলেসে ইউনিটি ফেডারেশন করার প্রস্তাব একটি পাগলের প্রলাপ বা ধারণা, মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এই সকল মন্তব্য আলোচনার মাধ্যমে ডা: মাহবুব খান প্রথম অবস্হায়  অর্জন করেন।  

ডা: মাহবুব খান জানান যে, এই সকল নেগেটিভ চিন্তা চেতনার কারণে শুরু করতে দেরী হয়। তবে একজন ব্যাক্তি ইঞ্জিনিয়ার মুকলেস ভূইয়ার অনুপ্রেরণায় তিনি বাস্তবে রূপ দেওয়ার সাহস পান। তিনি তাকে বলেন- ইউনিটি ফেডারেশন গড়া সম্ভব, কারণ আপনার কোন রঙ নেই!

অতএব, ২০০৬ সালের ৪ জুন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সংগঠনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে জানান হলো ইকোনো লজ মটেলের কনফারেন্স রুমে (৩৪০০, ওয়েস্ট থার্ড স্ট্রীট, লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া)। 

উক্ত প্রথম মিটিং এ নানা ধরণের গরম গরম মতবিনিময়ের মাধ্যমে অবশেষে উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে ইউনিটি ফেডারেশন, বাফলার জন্মলাভ করে। সেই ঐতিহাসিক অধিবেশনে ৩৫/৪০ জন ব্যাক্তিবর্গের ২৫টি সংগঠন উপস্থিত ছিল। উক্ত মিটিং এ ইঞ্জিনিয়ার ইশতিয়াক চিশতি বাফলা সৃষ্টির জন্য একটি ক্যাকটাস গাছ ডা: মাহবুব খানকে উপহার দিয়ে বলেছিলেন- লস এঞ্জেলেস কমিউনিটির মরুভূমিতে এই ইউনিটি ফেডারেশনের মত ফুল ফোটাতে এসেছেন, এই ক্যাকটাস উপহার দিলাম, মরুভূমিতে ফুল ফুটুক। 

প্রথম অধিবেশনে যারা উপস্থিত হয়ে ইউনিটি ফেডারেশন প্রস্তাব বাস্তবানে সম্মিতি দিয়েছিল তারা হলেন- আবুল হোসেন (মঞ্জু), আবুল ইব্রাহিম, আবুল কাশেম তোহা, আহমেদ কবীর, আলী আহমেদ, আতিক রহমান, দিলশাদ রহমান, ডা: এম এ হাসেম, এমদাদুল হক (বব), এনামুল হামিদ ফারহানা সাঈদ, ফেরদৌস খান, ইমতিয়াজ হাসান (সোহেল), ইশতিয়াক চিশতি, ইসমাইল হোসেন, কামাল খান, এম এ হানিফ, মাহাবুব রহিম, মাহাবুব খান, মুজিব সিদ্দিকী, মো: আনিসুর রহমান, মো: মাহাবুব রহিম, মো: এনামুল হক (এমরান), মো: আহসান, মুজিবুর রহমান, মুশফিকুর চৌধুরী (খসরু), নাজমুল উল্লাহ, ওমর হুদা, কুদ্দুস খান, সংজয় মিঞা, সামসুল ইসলাম, স্বরাজ, এস এম আব্দর রাজ্জাক, সাঈদ আবেদ নিপু ও জয়নুল আবেদিন। 

প্রথম অধিবেশনেই বাফলা গঠনের সাথে সাথে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে গঠন প্রণালীও নিদ্ধারিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশন হয় ৩০ জুলাই ২০০৬ সালে। যা হয়েছিল শ্যাটো রিক্রিয়েশন সেন্টারে। এখানে উপস্থিত হয়েছিল ৪০ জন কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব ৩০টি সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে। 

উক্ত অধিবেশনে আলোচনা হয় ইউনিটি সেলিব্রেশন ডে কিভাবে পালন বা উদযাপন করা যায়। সেখানে প্রায় ১২ রকমের আইডিয়ার প্রস্তাব আসে।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার। তার কার্যালয় ছিল দেশী রেস্টুরেন্টের ভবনে। যেখানেও কমিউনিটির অনেক ঘটনার ইতিহাস রচিত হয়েছিল।

প্রথম দুটি প্যারেড কো অর্ডিনেট করেন ডা: মাহবুব খান, কারণ তখনও বাফলার সংবিধান প্রণয়ন হয়নি এবং কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি তৈরি হয়নি। দ্বিতীয় বছর ছিল সংবিধান প্রণয়নের বছর। ডা: আবুল হাসেম ২০ পৃষ্ঠার একটি খসড়া সংবিধান প্রনয়ন করে আনেন যা, ১০ পৃষ্ঠায় পরিণত হয়। সংবিধান প্রণয়নেও ন্যাক্কার জনক ঘটনার অবতারণা হয়েছিল।

বিগত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭-এ বাফলার সংবিধান অনুমোদন হয় এবং ২৭ অক্টোবর বাফলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ধার্য হয়। উক্ত সভায় ইশতিয়াক চিশতি, জাহিদ হোসেন পিন্টু সহ অন্যান্য সহযোগীবৃন্দ অধিবেশন দখল করে ফেলে এবং নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে অপর পক্ষকে গালিগালাজ করে। ফলে ২০০৭ এর প্যারেড প্রথমবারের মত সাব কমিটির মাধ্যমে আয়োজন সম্পন্ন করে।প্যারেড হয়েছিল ৩০ মার্চ ২০১৮ সালে লিটল বাংলাদেশের উপর এবং ফেস্টিবল হয়েছিল শ্যাটো সেন্টারে।

দ্বিতীয় বছরে কিছু ব্যাক্তির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বাফলা কর্মকান্ড এগিয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে ছিল- কমিউনিটিতে বাফলার প্রচার, ফান্ডরাইজিং, কালচারাল সমৃদ্ধি, বাফলার থীম সঙ্গীত, বাফলার লোগো, বাফলার ওয়েবসাইড প্রণয়ন সহ বাফলাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার পক্ষে সাহায্য করেছিল তারা হলেন, এমদাদুল হক (রব), এ কে এম তোহা, সালেহ কিবরিয়া, ড. শাহ আলম, খালেদ হোসেন, দেলোয়ার চৌধুরী এবং সুসময় আহমেদ উল্লেখযোগ্য। 

দ্বিতীয় প্যারেডের প্যারেড মার্শাল ছিলেন শরিফ চীপ লি বাকা এবং বিশেষ অতিথি টম ল্যাবাঞ্চ। বাংলাদেশ থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছিলেন, সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম চৌধুরী এবং শিল্পী ছিলেন- মমতাজ বেগম।

২০০৮ এর প্যারেড হওয়ার পর বাফলার এক্সিকিউটিভ কমিটি জেনারেল এ্যাসেম্বলিতে সংবিধান অনুমোদন করে এবং ৫ সদস্য বিশিষ্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন হয়, যা পরবর্তীতে ৭ সদস্যের ক্যাবিনেটে পরিনত হয়। 

 প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সকলে ডা: মাহবুব খানকে অনুরোধ করলে তিনি অস্বীকৃতি জানালে জয়নুল আবেদিন ও জলিল খান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ন হন। অনেক ইসি কমিটির সদস্যদের অনুরোধে ডা: হাসেম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। 

অপরদিকে জয়নুল আবেদিন ও জলিল খান চরমভাবে হেরে গিয়ে বাফলা ছেড়ে চলে যান এবং বাফলা সম্পর্কে নেগেটিভ প্রচারণা শুরু করেন। এই সময় থেকে ডা: মাহবুব খান সম্পর্কে নানান কুৎসা রটনা করতে থাকে অপর পক্ষ। তার মূল কারণ ছিল এক্সিকিউটিভ কমিটিতে ছিল মুসলিম উম্মা (মুনা) সংগঠন। এই সংগঠন বাফলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য বাফলাকে একটা লেভেলের মধ্যে ফেলে দেয় বাফলা থেকে বেরিয়ে আসা দল। কিন্তু বাফলার সংবিধান অনুযায়ী মুনার সংগঠনকে বাফলা (আমেরিকান আইনে) জোরপূর্বক বের করে দিতেও পারেনা। তাছাড়া ইউনিটি ফেডারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রবাসী সংগঠনের ঐক্যবদ্ধতা একটি প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হোমল্যান্ডে মাদার ল্যান্ডকে তুলে ধরা। দেশের জাতীয়তা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল তারাই অংশগ্রহণ করতে পারবে।

যা হোক, নির্বাচনের পর ব্যাপক আকারে অভিষেক উদযাপিত হয় এবং নতুন ক্যাবিনেট দুদিন ব্যাপী ২৮-২৯ মার্চ ২০০৯ এ প্যারেড ও ফেস্টিবলের আয়োজন করেন।

এ উপলক্ষ্যে, ডা: হাসেম বাংলাদেশ থেকে বৃহদাকার বাংলাদেশের পতাকা নির্মান করে আনেন যা আজও প্রতিটি প্যারেডে দেশের সম্মান বহন করে চলেছে। তিনি লিটল বাংলাদেশ এলাকার লাইট পোস্টে অফিসিয়াল ব্যানার ঝুলিয়ে ছিলেন। যা দেশের কালচার ও কৃষ্টিকে তুলে ধরেছিল। তিনি প্রথম বাফলার ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন।

প্রথম ক্যাবিনেটে ছিলেন- ডা: আবুল হাসেম, এ কে এম তোহা, মেজর সাইফ কুতুবি, আনিসুর রহমান এবং কুদ্দুস খান। তৃতীয় প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়, ২৯ মার্চ। শুরু হয়েছিল শ্যাটো সেন্টার থেকে (৪র্থ স্ট্রীস্ট এবং ভারমন্ট) এবং মঞ্চ তৈরি হয়েছিল ৪র্থ স্ট্রীটের উপর। সেখানে ছিল কার্ণিভাল, রাইডস্, গেমস ইত্যাদি। এই প্যারেডের প্যারেড মার্শাল ছিলেন, শাঈখ সিরাজ এবং বাংলাদেশ থেকে শিল্পী এসেছিলেন, সামিনা চৌধুরী ও কুমার বিশ্বজিৎ।

২য় নির্বাচন হয় ২০০৯-২০১০ এর কার্যকরী কমিটির, সামসুদ্দিন মানিক ছিলেন চীফ ইলেকশন কমিশনার। দুজন প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ছিল- খন্দকার আলম এবং সাঈদ কুতুবি। কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে কুতুবি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এই সময় বাংলাদেশ ডে প্যারেড ও ফেস্টিবল হয়েছিল ১৭ ও ১৮ এপ্রিল। দেরীতে হওয়ার কারণ হচ্ছে তৌফিক সোলায়মান তুহিন শ্যাটো সেন্টার প্যারেডের নিদ্ধারিত দিন সমূহ বুকিং দিয়ে রেখে ছিলেন। ফলে খন্দকার আলম নিদ্ধারিত সময়েরে পরিবর্তে প্যারেড পিছিয়ে শ্যাটোতে ফেস্টিবল করা হয় ১৭ ও ১৮ এপ্রিল ২০১০। ( ২০১০ সালে   মার্চে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোস্ঠি ক্যালিফোর্নিয়া ২ দিন ব্যাপি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে শ্যাটো রিক্রেয়েশন সেন্টারে যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে আসেন তৎকালীন জাতী সংঘের স্হায়ী প্রতিনিধি ও রাস্ট্রদূত ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন! শ্যাটো সেন্টার বুক দিয়ে রাখার ব্যাপারটা লস এন্জেলেস পার্ক ও রিক্রিয়েশন ডিপার্টমেন্ট ও সিটি অব লস এন্জেলেসে তখনকার শুনানীতে গুগল করলেই পাওয়া যাবে। )

বাফলার প্রথম চ্যারিটি প্রজেক্ট শুরু হয় এই সময়ে। হাইতির ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সাহায্য প্রদান করে। ২০১০ এর প্যারেড মার্শাল ছিলেন, ডা: কালিপ্রদীপ চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর মঈনুজ্জামান মিঞ। শিল্পী হিসেবে এসেছিলেন মরহুম আইয়ূব বাচ্চু।

২০১০ সালের বাফলার নির্বাচন ছিল ব্যাতিক্রমধর্মী। দুটি শক্তিশালী প্যানেলের মাধ্যমে হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনী লড়াই হয়। একটি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন সামসুদ্দিন মানিক যার নাম ছিল ড্রিম টিম এবং অপর প্যানেলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জসিম আশরাফী, তার প্যানেলের নাম ছিল রিয়েলটিম।  উভয়ই পরিচিতি সভা নৈশভোজের মাধ্যমে আয়োজন করেছিল। নির্বাচনে জসিম আশরাফীর প্যানেলের সকল সদস্যই বিজয়ী হয়। একটি পদ ব্যাতিত। জসিম আশরাফীর সময়টা ছিল আরও সংকটময় বাফলার অস্থিত্বের জন্য কারণ এই সময় বিভক্তির একটা আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল। সিটির একটি পাবলিক মিটিং এ মুজিব সিদ্দিকীকে বাফলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং মুজিব সিদ্দিকী বিষয়টি সংশোধন না করে বক্তব্য রেখেছিলেন। উক্ত পাবলিক মিটিং এ বাফলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জসিম আশরাফী উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি পরবর্তী ইসি মিটিং এ উত্থাপিত হয়। এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তেজনা শান্ত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নজরুল আলম মুজিব সিদ্দিকীকে মিটিং থেকে বাইরে সরিয়ে আনেন। সেই সাথে ইসমাইল হোসেনকেও। অপমানিতবোধ করে সেই মিটিং থেকে তাদের দলবল সহ বের হয়ে যায় এবং বাফলা রিফর্ম গ্রুপ তৈরি করে প্যারেডকে পরিচালনার চেষ্টা চালায়। ইসির একটি প্রতিনিধি দল তখন বাফলা রিফর্ম গ্রুপের সাথে সমঝোতায় তাদের দাবী দাওয়া মেনে নেয় কিন্তু পরবর্তীতে রিফর্ম গ্রুপ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা বাফলার রিফর্ম গ্রুপের কার্যক্রম ভেঙে দিয়ে বাংলার বিজয় বহরের সৃষ্টি করে। সে বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ বাফলা প্যারেড ও ফেস্টিবল উদযাপিত হয়। বাফলা তার সঙ্কট কাটিয়ে সাফল্যের সাথে প্যারেড করেছিল, ওই সময় প্যারেড মার্শাল হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কংগ্রেসম্যান ব্রাড শারম্যান এবং প্রধান অতিথি ছিলেন- ডা: কালি প্রদীপ চৌধুরী।

২০১১-২০১২ সালের ক্যাবিনেট প্রেসিডেন্ট ছিলেন সামসুদ্দিন মানিক এবং আমি (কাজী মশহুরুল হুদা) উক্ত ক্যাবিনেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। এ সময়ে ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ২০১২ তে প্যারেড হয়েছিল। সামসুদ্দিন মানিক বাফলাকে ইংল্যান্ডে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলেন। আমি বাফলার চ্যারিটি প্রজেক্ট হিসেবে বাংলাদেশে কম্বল বিতরণ করেছিলাম যার পিছনে পরিকল্পিত হাত ছিল জনাব সামসুদদিন মানিক ও মারুফ ইসলাম। সে বছর প্যারেড মার্শাল ছিলেন, শেরিফ লিবাক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের এমপি মো: মনিরুল ইসলাম এবং আরও অতিথি ছিলেন- চারলি বেক (এলএপিডি চিফ), মাইকেল ডাউনিং (এলএপিডি ডেপুটি চিফ), এরিক গার্সেটি (কাউন্সিল মেম্বার), টম ল্যাবাঞ্জ (কাউন্সিল মেম্বর) এবং ডেন পেরি (কাউন্সিল মেম্বর)। শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্থ (সোলস)।

উল্লেখ্য, বাফলার ফেস্টিবল এই সময় হয়েছিল লিটল বাংলাদেশের মুক্তিচেতনা চত্বর এলাকায় অর্থাৎ আলেকজেন্ডার স্ট্রীস্ট বন্ধ করে থার্ডস্ট্রীটের কাছে মঞ্চ তৈরি করে। ব্যাতিক্রমধর্মী ফেস্টিবল ছিল সেটি। 

২০১২-২০১৩ এর ক্যাবিনেট প্রেসিডেন্ট ছিলেন ড্যানী তৈয়ব। তিনি বাফলার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। প্যারেড এবং ফেস্টিবল হয়েছিল ৩০ ও ৩১ মার্চ ২০১৩। প্রথমবারের মত বাফলা ভার্জিল মিডল হাইস্কুলের মাঠে প্যারেড উদযাপন করে। শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিল শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি। এবছর বাফলার অন্যান্য কার্যক্রমের বিস্তৃতি লাভ করে। যেমন- বাফলা ঈদে রিউনিয়ন, ঈদে মেলা, বাফলা হেলথ ফেয়ার এবং সেমিনার প্রথমবারের মত উদযাপিত হয়। বাফলার চ্যারিটি কমিটি তৈরি হয় এই সময়ে এবং বাফলার প্রথম একুশে উদযাপন চালু হয়। বাফলার প্যারেড মার্শাল ছিলেন- জ্যুডি চু (কংগ্রেস ওমেন), সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেয়র এরিক গার্সেটি, বিশেষ অতিথি টম ল্যাবাঞ্জ ও এ্যাসেম্বেলী মেম্বর ম্যাট ড্যাব্যানে। বাংলাদশে থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন এনাম আহমেদ চৌধরিী। বিশেষ অতিথি ফায়ার চিফ এমিলি ম্যাক, পুলিশ ডেপুটি চিফ মাইকেল ডাউনিং, শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিল প্রিতম আহম্মেদ, শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি। 

বিবর্তনের মাধ্যমে বাফলার বিশুদ্ধকরণ ও প্রতিষ্ঠার শেকড় চারিদিকে বিস্মৃতি লাভ করতে থাকে। প্রতিবছরই নতুন ক্যাবিনেট নতুনত্বের সৃষ্টিতে বাফলার হাতকে কমিউনিটির মাঝে বিস্তার লাভ করে এবং সাংগঠনিক নিয়ম শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। বাফলার মিটিং প্রক্রিয়ার সাথে এ পর্যন্ত কেউ সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি (এমন কি উত্তর আমেরিকার কোন সংগঠন বা ফেডারেশন, বাফলা এদিক থেকে একটি দৃষ্টান্ত) সাংগঠনিক আইন শৃঙ্খলা ভাঙ্গের জন্য বাফলা থেকে অনেক ব্যাক্তিদেরকে অপসারণ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, সাঈদ আবেদ নিপু, কুদ্দুস খান, মারুফ ইসলাম প্রভৃতি। 

প্রয়োজন বোধে বাফলার ইসি অনেক নিয়ম কানুন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে। বাফলার ইসিই একমাত্র শক্তিতে পরিণত হয়। ২০১৩ থেকে শুরু হয় ক্যাবিনেটের সময় কাল একবছর থেকে পরপর দু বছর। এ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন শিপার চৌধুরী। পরপর দুবারের প্যারেড পরিচালনা করেন তিনি। বাংলাদেশ ডে প্যারেড এবং ফেস্টিবল হয়েছিল- ২৯ ও ৩০ মার্চ ২০১৪ এবং ২৮ ও ২৯ মার্চ ২০১৫। শিপার চৌধুরী প্রথম বাফলার নিজস্ব অফিসের ব্যাবস্থা করেন। প্যারেডে ফ্লোট সংযোজন করেন এবং বাফলা চ্যারিটি প্রজেক্ট ও কার্যক্রমের বিস্তৃতি লাভ করেন। বাংলাদেশ ডে প্যারেড ২০১৪ এর প্যারেড মার্শাল ছিলেন লস এঞ্জেলেসের ডেপুটি মেয়র রিক কোল এবং অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, পল ক্রোকেরিয়ান (কাউান্সিলম্যান), মিচ্ ও ফ্যারেল (কাউন্সেলম্যান) প্রমুখ। শিল্পী হিসেবে ছিল বেবী নাজনীন এবং গ্র্যান্ড স্পন্সর ছিলেন- মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী। 

পরবর্তী প্যারেড হয় ২০১৫ সালে। এসময় প্যারেড মার্শাল ছিলেন- শাঈখ সিরাজ। উপস্থিত ছিলেন- হার্ব ওয়েসন জুনিয়ার (প্রেসিডেন্ট অব লস এঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল) প্রমুখ। শিল্পী হিসেবে ছিলেন বিউটি দাস, শাহ মাহমুদ প্রমুখ। পরবর্তী ক্যাবিনেটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মেজর (অব.) এনামুল হামিদ। তিনি ইসি’র অনুমতিক্রমে দু’বছরের পরিবর্তে এক বছরের জন্য অফিস চালানোর অনুমতি নেন। ফলে তিনি শুধুমাত্র ২০১৫-২০১৬ এর বাংলাদেশ ডে প্যারেড পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে বাফলার মধ্যে একটা নিয়মতান্ত্রিকতা ও সকল ধরণের ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকতায় উত্তীর্ণ এবং পরিচালিত হচ্ছে। স্বচ্ছতার কথা বলতে গেলে বলতে হয়- শুরু থেকেই হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রে এমন স্বচ্ছতা অন্য কোন ফেডারেশন বা সংগঠনের মধ্যে পরিলক্ষিত হবে কিনা বলা যায় না। এছাড়া স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ বাফলার পদ্ধতির মধ্যে নেই বললেই চলে। কারণ ইসিই সকল ক্ষমতার উৎস। অতএব, প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা আছে। এনামুল হামিদের সময়কালে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৬ ও ২৭ মার্চ ২০১৬। প্যারেড মার্শাল ছিলেন- স্টেস্ট ট্রেজারার জন চ্যাং এবং প্রধান অতিথি ছিলেন-শরিফ জিম ম্যাকডেনাল, বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি চীফ অব পুলিশ মি: মাইকেল ডাওনিং এবং ডা: কালী প্রদিপ চৌধুরী। শিল্পী হিসেবে আসে বাপ্পা মজুমদার এবং শাহনাজ বেলী।

পরবর্তী ২০১৬ থেকে ২০১৮ পুনরায় প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচিত হন ডা: আবুল হাসেম। বাফলার নিয়ম আছে কোন প্রেসিডেন্ট ৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত প্রার্থী হতে পারবে না। সেই নিয়ম মেনেই ডা: হাসেম আবার প্রেসিডেন্ট হন। এখানে উল্লেখ্য যে, ডা: হাসেম মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তার মেয়াদের এক বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্যারেড পরিচালনা করেন। তার সময় কালে প্যারেড মার্শাল ছিলেন সিনেটর কামালা হেরিস এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেয়র এরিক গার্সেটি, কংগ্রেসম্যান ব্রাড শারমেন, কাউন্সিলম্যান পল ক্রেকোরিয়ান, ডেভিড বাউ, মিচ ও ফ্যারেল এবং হার্ব জে ওয়েসন প্রমুখ। শিল্পী হিসেবে ছিলেন- কুমার বিশ্বজিৎ।

বাফলার সাতকাহন লেখা পর্যন্ত বাফলার ২০১৮-২০২০ এর ক্যাবিনেট প্রেসিডেন্ট হলেন নজরুল আলম। নজরুল আলম একমাত্র ব্যাক্তি যিনি বাফলার ক্যাবিনেটে অরগানাইজারি সেক্রেটারী থেকে জেনারেল সেক্রেটারী এবং পরিশেষে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। নজরুল আলমের প্যারেড মার্শাল ছিলেন কংগ্রেসম্যান মি: জিমি গোমেজ, বিশেষ অতিথি লস এঞ্জেলেসের কন্সাল জেনারেল মি: প্রিয়তোষ সাহা। বিশেষ অতিথি প্রাক্তন মেয়র এন্থোনিও ভিলারিও গোছা, ডা: কালি প্রদীপ চৌধুরী এবং শিল্পী ছিল শুভ্রদেব, জিনাত আরা মুন এবং শাহ মাহবুব। 

এই ছিল বাফলার এক যুগের কাহিনী। বাফলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে বাফলার প্লাটফর্ম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে কমিউনিটির মাঝে; যা আজ হোমল্যান্ডে, মাদার ল্যান্ডের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরার প্রয়াস সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে কমিউনিটি ও দেশের মানুষের কল্যাণে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। 

বাফলার মিশন হলো-

১) একতা

২) চ্যারিটি

৩) কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এবং

৪) বাংলাদেশ ডে প্যারেড। 

এগুলোই বাফলার প্রধানতম উদ্দেশ্য।

বাফলা থেকে বিগত এক যুগের মধ্যে ঝরে পড়া মানুষ বাফলাকে বহুভাবে নেগেটিভ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে গর্বের সাথে প্যারেডের মাধ্যমে তুলে ধরছে সেখানে কোন অপবাদ মানায় না। আসলে যারা বাফলা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পারেনি, তারা অপবাদ প্রলেপন করেছে । কারণ, বাফলার প্রতিষ্ঠাতা ডা: মাহবুব খানও কুৎসারটনা থেকে বাদ পড়েননি। আজ ধীরে ধীরে এই অপবাদগুলো মুছে যাচ্ছে। কারণ কমিউনিটি দেখছে আসলে বাফলা কি করছে বাফলার সকল কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা পরিলক্ষিত হয়। নজরুল আলম বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে যথাযথ মূল্যায়নের পর আর কেউ কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না। 

পরিশেষে আমি দুটি বিষয়ে উল্লেখ করব 

বাফলার চ্যারিটেবল কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠাতা ডা: মাহাবুব খান সম্পর্কে।

ড. মাহাবুব খান :

ড. মাহাবুব খান বাফলার প্রাণ পুরুষ এবং স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে পরিচিত। ড. মাহবুব খান একজন পদার্থ বিজ্ঞানের এবং এ্যাস্টোনোমির অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্ণিয়া স্টেস্ট ইউনির্ভাসিটি, ইউএসসি, লস এঞ্জেলেস কলেজ, এল ক্যামিনো কমটন কলেজ, কোস্টলাইন কলেজ সহ অন্যান্য কলেজের উপদেষ্টা অনুষদ। ড. খান বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন এবং ক্লাসরুম শিক্ষক হিসেবে বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রদান করেন।তিনি অনলাইনে ইউএস আর্মিদেরকেও শিক্ষা দেন এবং ইউএসএ বন্দী ছাত্রদেরকে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেন।

 ড. মাহাবুব খান ১৯৬৪ সালে চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসিতে সর্বচ্চ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। দু’বছর ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন করেন এবং ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এমএসসি ফাইনাল পরিক্ষা এবং স্বাধীনতার পর তিনি থিসিস করেন ঢাকা এটমিক এনার্জি সেন্টার। স্বাধীনতার পর এম এসসি শেষ করে তিনি ১৯৭২ সালে পদার্থ বিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তখন বিভাগীয় কোন ছাত্র ছিলনা। তিনি এবং তার সহযোগী অধ্যাপক মিলে প্রথম একাডেমিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে মাহাবুব খান পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট করার জন্য বিদেশ গমন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি বোস্টনে পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। 

বিগত ২৫ বছর তিনি হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্স এণ্ড ডেভলপমেন্টে বিভিন্ন আমেরিকান হাইটেক কম্পানিতে কাজ করেছেন। ড. খান আইবিএমএ সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে সিলিকনভ্যালীতে কাজ করেন। শিকাগোতে পোস্ট ডক্টরেড রিসার্স ফেলো করার সময় তিনি আবিস্কার করেন মেটালিক মেগনোটিক মালটিলেয়ার সুপারলেটিস। মাহাবুব খানের ৩০টির অধিক আন্তর্জাতিক সায়েন্টিফিক জার্নালে পাবলিকেশন আছে। ব্যাক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী ও চার সন্তান (দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে) আছে। বিগত ২৫ বছর ধরে তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছেন। বে এরিবা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (বাবা)’র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। 

বাফলার চ্যারিটি কার্মকান্ড :

যদিও ২০১০ সালে বাফলা হাইতির ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যে অর্থায়ন প্রদান করেছিল কিন্তু প্রকৃত অর্থে বাফলার চ্যারিটি প্রকল্প শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। তাছিল বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ। আমি তখন বাফলার ক্যাবিনেটে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেই মিশনের নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকায় কম্বল বিতরণ করি। এ ক্ষেত্রে মারুফ ইসলাম ছিল উদ্দ্যোক্তা এবং প্রেসিডেন্ট সামসুদ্দিন মানিক ছিলেন অর্থায়নের সহযোগী। এই চ্যারিটি কার্যক্রম সাফল্যের থেকেই চ্যারিটি এজেন্ট কমিটি গঠিত হয় সকল প্রাক্তন সভাপতিদের সম্বন্নয়ে। আজ বাফলার প্যারেডের পর চ্যারিটি প্রকল্প একটি অন্যতম অধ্যায়। বাফলা তিনটি ভাগে এই চ্যারিটি প্রকল্প চালু করেছে। হোমল্যান্ড অর্থাৎ আমেরিকায়, মাদারল্যান্ড অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক চ্যারিটি প্রকল্প।

বাফলা এ পর্যন্ত যে সকল চ্যারিটি দেশ ও বিদেশের কমিউনিটির মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে তাহলো :

কম্বল বিতরণ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জন্য, লস এঞ্জেলেসে মিশনে শীতের জ্যাকেট বিতরণ ও খাদ্য বিতরণ, ফ্লু ইঞ্জেকশন, মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তির ব্যাবস্থা, বাংলাদেশে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ১০টি কবর ক্রয়, দরিদ্র মানুষের জন্য ফান্ড তৈরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফান্ড, আর্সেনিক মুক্ত খাওয়ার পানি সরবরাহের জন্য টিউবয়েল স্থাপন, স্বনির্ভর প্রকল্পের ফান্ড, যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকেই সেলাইমেশিন, রিক্সা, ভ্যান, গবাদি পশুক্রয় করে দিয়েছে। এছাড়া ডিসিক্রাইয়ের মাধ্যমে ৫জন ডিসট্রেস শিশুদেরকে স্পন্সার করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশন স্কলারশীপ চালু এবং বিকলঙ্গ ও অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের সাহায্য ইত্যাদি।

এক নজরে বাফলা চ্যারিটির কার্যক্রম:

কম্বল বিতরণ:বাফলা প্রতিবছর বিভিন্ন জেলায় শীতে কম্বল বিতরণ করে। ২০১১সন থেকে চালু রয়েছে। 

মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্প: সিলেট নিবাসী দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৬ সালে।তারমধ্যে একজনকে গৃহ নির্মাণ এবং আরেকজনকে ৮সিট্ বিশিষ্ট নুতন টেম্পো কিনে দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া নিবাসী আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে এক লক্ষ্য টাকা প্রদান করে উনার শেষ সম্বল এক খন্ড জমি বর্গাদারের কাছ থেকে উদ্ধার করতে বাফলা চ্যারিটি গত বছর সাহায্য করে।  বাফলা মুক্তিযোদ্ধাদের এই সামান্যতম সাহায্যের মাধ্যমে মাতৃভূমির কিছুটা হলে ও ঋণ শোধ করতে পেরেছে বলে বিশ্বাস করে. বাফলার মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্প একটি স্থায়ী প্রকল্প যা আগামী দিনে ও চলতে থাকবে  প্রকৃত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে।

কবরস্থান প্রকল্প : প্রবাসে প্রায়শঃই আমাদের বাংলাদেশী ভাইবোনদের মৃত্যুর পর এক চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়. বাফলা চ্যারিটি এসব অনাথ ভাই বোনদের জন্য ১০টি কবরস্থান ইতিমধ্যে ক্রয় করতে সক্ষম হয়েছে। আগামীতে তা আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আছে. এসব কবরস্থান শুধুমাত্র প্রকৃত অসহায় আমাদের ভাই বোনদের জন্য বরাদ্দ করা হবে. বাফলা চ্যারিটি ইতিমধ্যে “বাফলা ফিউনারেল সার্ভিস” নাম একটি ফান্ড গঠন করেছে যার অর্থ আগামীতে অসহায় ভাই বোনদের ফিউনারেল  সার্ভিসের আনুষাঙ্গিক খরচে অনুদান করতে সক্ষম হবে.

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবিক প্রকল্প: বাফলা চ্যারিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে ও পিছিয়ে নাই. বাংলাদেশে রানা প্লাজার চারজন শ্রমিককে আর্থিক সাহায্য দান , হাইতির টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য $২৫০০, নেপালের প্রলয়ংকর ভুমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য $১৫০০ , বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যায় নওগাঁ জেলার বাটালি গ্রামের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ২০টি বাড়ি পুননির্মাণ করতে ১২ হাজার ডলারের অনুদান, নবীন কবি হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিত সেতা শতাব্দীর চিকিৎসার জন্য $১০০০ ডলার , বাংলাদেশের এক  স্বনামধন্য সংগীত শিল্পীর  চিকিৎসার জন্য $৩৫০০ ডলার প্রদান , লস এঞ্জেলসে এক বোনের দুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য $১০০০ ডলার , বাংলাদেশ থেকে আসা এক তরুণ দালাল দ্বারা প্রতারিত হয়ে লস এঞ্জেলসে অসহায় হয়ে পড়লে তাকে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার বিমান ভাড়া ও $৩০০ ডলার প্রদান, লস এঞ্জেলসে অবস্থানরত এক তরুনের ক্যান্সার  চিকিৎসার  জন্য সমস্ত অর্থ ব্যায় করে পরিবার দিশেহারা এবং চিকিৎসকরা যখন তার হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন সেই অসহায় যুবকের শেষ ইচ্ছা ছিল মেক্সিকোর একটা ক্লিনিকে শেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা , তার ধারণা ছিল সে ভালো হয়ে যাবে কিন্তু পরিবারের সেই সক্ষমতা ছিল না , বাফলা চ্যারিটি সেই যুবকের আশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল , তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নাই কিন্তু বাফলা পাশে দাড়িয়েছিলো , এ ছাড়া ও অনেক ছোট বড় অনুদানের ব্যবস্থা বাফলা চ্যারিটি করে আসছে গত দশটি বছর ধরে।

সাম্প্রতিককালে যে ভয়াবহ আগুনের দাবানলে  ভেঞ্চুরা কাউন্টির শত শত পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বাফলা চ্যারিটি এরকমই একটা শেতাঙ্গ পরিবারের পাশে দাড়াতে সক্ষম হয় হলিডের গিফট সামগ্রী ও নগদ $১২০০ ডলারের সাহায্য দ্বারা।

ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় বৃত্তি : বাফলা চ্যারিটি ২০১৬ থেকে পাঁচ জন মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে।

স্বনির্ভর প্রকল্প:  বাফলা চ্যারিটি ২০১৬ থেকে মানিকগঞ্জের একটি বিকলাঙ্গ স্কুলে প্রতি বছরের টিফিনের অর্থ এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক ক্লাসের জন্য এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে থাকে। কিশোরগঞ্জের পিরিজপুর গ্রামের একটা পরিবারকে গরু কিনে দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

আর্সেনিক মুক্ত বাংলাদেশ:  বাফলা চ্যারিটি সম্প্রতি সাতক্ষীরার বারবারই গ্রামেআর্সেনিক ফ্রি টিউবয়েল বসানোর জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে যা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই টিউবয়েলটি স্থাপনার ফলে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের আনুমানিক ১০০টি ছাত্র-ছাত্রী ও ১৩টি পরিবার আর্সেনিক ফ্রি খাবারের পানি খেতে পারবে। রাজশাহীর উপকণ্ঠের আরেকটি দুর্গম গ্রামে একটি ডিপ টিউবয়েল সাবভারসিব পাম্প সহ বসানোর কাজ শুরু হবে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে যা দ্বারা উপকৃত হবে একটি গ্রামের ২৩টি পরিবার যারা সারা গ্রামের তিনটি পুকুরের উপরের নির্ভরশীল খাবারের পানির জন্য।

 বাফলা একটি ননপ্রফিট (৫০১সি) অরগানাইজেশন। তারা তাদের চ্যারিটি প্রকল্প এবং প্যারেডের জন্য দেশ-বিদেশের বিত্তবান ব্যাক্তিদের কাছে আবেদন জানায় ট্যাক্স ডিডাকটেবল অনুদান দেওয়ার। যাদের সমর্থ আছে এবং দেশাত্মবোধের চেতনায় বাফলার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে চায়, অংশগ্রহণে ইচ্ছুক বা সহায়তা করতে চায়, তাদের জন্য বাফলার দ্বার সব সময় উন্মুক্ত। 

বাফলা একটি অরাজনৈতিক ফেডারেশন। সকল প্রকার ইর্ষা, হিংসা, বিদ্বেষের উর্ধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একই পতাকার তলে দাঁড়িয়ে দেশমাতৃকাকে বিশ্বের বুকে দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি এবং মানবতার কাজ করছে। বাফলার থীম সংগীতই বাফলার জাতীয় সঙ্গীত। 

যেটি ’বাফলার ঐক্যের সঙ্গীত’ নামে পরিচিত –

“তোমার মতের সাথে আমার মতের বেমিল থাকতে পারে

তোমার কাজের সাথে আমার কাজের বেমিল থাকতে পারে

তোমার ধর্ম-বর্ণ আমার সাথে ভিন্ন হতেও পারে

মোরা একটি স্বাধীন দেশের মানুষ একটি পতাকা

সেই পতাকা হাতে নিয়ে ঐক্যের গান গাই

আমরা বাফলা, আমরা বাফলা, আমরা বাফলা।

তোমার আমার ভিন্ন মতামত থাকতেই তো পারে

তাই নিয়ে হানাহানি নয় সংঘাত একে অন্যেরই সাথে 

সংঘাত নয় চলো ঐক্যের পথে

কোন দ্বিধা নেই আর শপথ নিতে

মনে বিদ্বেষ রাখবোনা।

মোরা একটি স্বাধীন দেশের মানুষ একটি পতাকা

সেই পতাকা হাতে নিয়ে ঐক্যের গান গাই

আমরা বাফলা, আমরা বাফলা, আমরা বাফলা।

লখো শহীদের রক্তে রাঙানো আমাদের বিজয় নিশান

জীবন দিয়ে রাখতে হবে সেই পতাকার সম্মান

বিপ্লব নয়, চলো শান্তির পথে

কোন দ্বিধা নেই আর শপথ নিতে

মনে বিদ্বেষ রাখবোনা।

মোরা একটি স্বাধীন দেশের মানুষ একটি পতাকা

সেই পতাকা হাতে নিয়ে ঐক্যের গান গাই

আমরা বাফলা, আমরা বাফলা, আমরা বাফলা।”

বাফলায় মিডিয়ার ভূমিকা :
জন্ম লগ্ন থেকে মিডিয়ার প্রচারণায় বাফলার কর্মকান্ড কমিউনিটি তথা উত্তর আমেরিকা ও বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে লস এঞ্জেলেসের মিডিয়া। কমিউনিটিতে তাদের অবদান অস্বীকার্য। বিশেষত একুশ মিডিয়া। যার সম্পাদক ছিলাম আমি এবং প্রকাশক জাহান হাসান। বিগত একযুগ ধরে আমাদের প্রচারণায় বাফলাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছিল বিশেষ ভূমিকা। কারণ একটি মিডিয়া সব সময় চেষ্টা করেছিল, এমনকি এখনও বাফলাকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। আমরাই একমাত্র মিডিয়া যারা সকল সময় বাফলার পজেটিভ কর্মকান্ড তুলে ধরেছি বহিঃ বিশ্বে। বিশেষ করে ইউটিউব জার্নালিজমের মাধ্যমে ধারণ করা ভিডিও ডকুমেন্টেড করেছি। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য করা যায় জাহান হাসান, আমি (কাজী মশহুরুল হুদা), এককালিন সময়ের জন্য কুদ্দুস খান এবং সৈয়দ এম হোসেন বাবু।
এ জন্য লিটল বাংলাদেশে বাফলার প্রথম অনুষ্ঠান ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একুশ নিউজ মিডিয়ার জাহান হাসান ও প্রবাস বাংলার কাজী মশহুরুল হুদাকে কয়েকবার সম্মাননাও জানানো হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সিসিলিতে ২৬ জানুয়ারি আয়েবার ১৫তম ইসি মিটিং
Next post জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের ঘোষণা
Close