Read Time:5 Minute, 36 Second

সেনাদের তাক করা অস্ত্রের পরোয়া না করে সু চির দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি দৃশ্যপট আছে হলিউড চলচ্চিত্র ‘দ্য লেডি’তে। মিয়ানমারের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই সু চি হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী। কিন্তু স্টেট কাউন্সেলরের দায়িত্ব নিয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আপস এবং সব শেষ গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বের কাছে তাঁর নৈতিক অবস্থান শূন্যে নেমে এসেছে। একের পর এক হারাচ্ছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।

কানাডার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট গতকাল বুধবার নজিরবিহীনভাবে সু চির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স তাঁর সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের পর তা পুরোপুরি কার্যকর হতে সিনেটে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে সু চির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার জন্যই কানাডা সু চির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে এবং এটাই দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কারো সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা।

২০০৭ সালে সু চিকে যখন কানাডা সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছিল তখন বিশ্বে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তুঙ্গে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে তাঁকে ‘এশিয়ার মেন্ডেলা’, ‘মানবাধিকারের নেত্রী’—এসব নামে অভিহিত করা হতো। কিন্তু গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে

জাতিগত নির্মূল শুরুর পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকেও তা আড়াল করার চেষ্টা করায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোই আবার বলেছে, সু চি এশিয়ার মেন্ডেলা নন। তিনি মানবাধিকারের নেত্রীও হতে পারেন না।

কানাডার সিনেটে সু চির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে সিনেটর ওমিডভার বলেন, সু চি, মিয়ানমার ও বিশ্বের জন্য এটিই যথার্থ বার্তা। তিনি বলেন, ‘কানাডা থেকে আমাদের জোরালো বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। আর এটি হলো আপনি যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকেন তবে আপনাকে কানাডায় স্বাগত জানানো হবে না। নিশ্চিতভাবে আপনার কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্বও থাকবে না।’

সিনেটর রায়নেল অ্যান্ড্রেচুক বলেন, সু চির নাগরিকত্ব বাতিল হওয়াই উচিত। কারণ কানাডা তাঁকে যে সম্মান দিয়েছে তা তিনি কলঙ্কিত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

২০১১ সালে নির্মিত হলিউড চলচ্চিত্র ‘দ্য লেডি’তে গণতন্ত্রপন্থী অং সান সু চি চরিত্রের অভিনেত্রী মিশেল ইয়ো এ বছরের শুরুতে কক্সবাজার এসেছিলেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে তিনিও এককথায় ‘ভয়ংকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে সু চি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পুরস্কার ও খেতাব অর্জন করেছিলেন। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটে তাঁর ব্যর্থতায় এক এক করে সব অর্জন হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাঁর অন্তত ১০টি খেতাব বা পুরস্কার বাতিল হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ফ্রিডম অব এডিনবরা, অ্যালি উইসেল অ্যাওয়ার্ড (যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট স্মৃতি জাদুঘর), ফ্রিডম অব নিউ ক্যাসেল, ফ্রিডম অব ডাবলিন, অনারারি প্রেসিডেন্ট (লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস), ফ্রিডম অব গ্লাসগো, ফ্রিডম অব শেফিল্ড, ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড ও ইউনিসান অনারারি মেম্বারশিপ (ট্রেড ইউনিয়ন) উল্লেখযোগ্য।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যরা সু চিকে দেওয়া শাখারভ মানবাধিকার পুরস্কারও বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের যুক্তি, একসময় মানবাধিকারের পক্ষে সংগ্রাম করা সু চিই এখন লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম কারণ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বালার বিজয় বহরের কনভেনর মিকাইল খান
Next post যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে ৭ কর্মকর্তা আহত
Close