Read Time:14 Minute, 17 Second

শ্রীলংকার বিপক্ষে অসাধারণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এই জয়ের মধ্য দিয়ে এশিয়া কাপে শুভ সূচনা করেছে টাইগাররা।

শনিবার দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে মুশফিকের সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৬১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ দল। টার্গেট তাড়া করতে নামা শ্রীলংকা ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ দলের হয়ে দুটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়া একটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব, রুবেল ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

ম্যাচে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের দিক থেকে এটা বাংলাদেশ সেরা ষষ্ঠ জয়। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সেরা জয় এই শ্রীলংকার বিপক্ষেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬৩ রানে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।

বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপার

ইনিংসের শুরু থেকেই শ্রীলংকাকে চেপে ধরে বাংলাদেশ দল। সময়ের ব্যবধানে লংকানদের উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ, মাশরাফি, মিরাজ ও রুবেল হোসেনরা। একের পর এক উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় হাথুরুসিংহের শীষ্যরা।

মিরাজের দ্বিতীয় শিকার থিসেরা

থিসেরা প্যারেরার উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি আছে। মিরাজের বলে পয়েন্টে থাকা রুবেলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লংকান অলরাউন্ডা থিসেরা প্যারেরা। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের শেষ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারায় হাথুরুসিংহের শীষ্যরা।

রুবেলে প্রথম শিকার ম্যাথিউস

বাদ রইলেন না রুবেল হোসেনও। মোস্তাফিজ, মাশরাফি, মিরাজের পর উইকেট শিকার করলেন রুবেল হোসেন। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই লংকান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের উইকেট তুলে নেন রুবেল। ম্যাথিউসকে এলবিডবিব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রুবেল। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৪ বল খেলে মাত্র ১৬ রান করেন লংকান অধিনায়ক।

রান আউট শানাকা

মাত্র ৫ রানেই সাজঘরে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল দাসুন শানাকার। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তামিম ইকবালের ইনুজরির কারণে বদলি ফিল্ডার হিসেবে নামা নাজমুল ইসলাম অপু এবং মাশরাফির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণে শেষ পর্যন্ত ক্যাচটি আর নেয়া হয়নি। ৫ রানের জীবন পাওয়া শানাকা পানি পান বিরতির পর রান আউটের ফাঁদে পড়েন। তার আগে ২২ বলে মাত্র ৭ রান করতে পেরেছেন।

মিরাজের শিকার কুশল, বিপর্যয়ে শ্রীলংকা

৩৮ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলংকাকে চরম বিপযর্য়য়ে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। মোস্তাফিজুর রহমানের পর মাশরাফি নেন পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে কুশল প্যারেরাকে সাজঘরে পাঠান অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে শ্রীলংকার মারমুখী ব্যাটসম্যান ফেরেন মাত্র ২৪ বলে ১১ রান করে।

মাশরাফির জোড়া আঘাত

শ্রীলংকাকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ দল। ৩২ রানে লংকান তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নিয়েছেন মোস্তাফিজ-মাশরাফিরা। শুরুটা করেন মোস্তাফিজ। এরপর দুই ওভারে উপল থারাঙ্গা এবং ডি সিলভাকে ফেরান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ইনিংসের শুরু থেকে একেরপর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাওয়া থারাঙ্গার উইকেট উড়িয়ে দেন মাশরাফি। ঠিক পরের ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে গেছে শ্রীলংকা।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন মোস্তাফিজ

কুশাল মেন্ডিসকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশ দলেকে ব্রেক থ্রু এনে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের করা ২৬১ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে শ্রীলংকা ক্রিকেট দল। মাশরাফিদের বোলিং লাইনআপ ভেঙে দেয়ার জন্যই শুরুতে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন লংকান ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ওভারে ১৩ রান তুলে নেয়া শ্রীলংকা, দ্বিতীয় ওভারেও মোস্তাফিজকে একেরপর এক বাউন্ডার ছাড়া করে। ওভারের শেষ বলে কুশাল ম্যান্ডিসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন কাটার মাস্টার।

মুশফিকের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬১

মুশফিকুর রহিমের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৬১ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ৪৯.৩ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে এ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা।

মুশফিক ১৫০ বলে ১৪৪ রান সংগ্রহ করেন। তার ইনিংসটি ছিল ১১টি চার ও চারটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় সাজানো। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফিরা। ইনিংসের প্রথম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় ওভারে ইনজুরির কারণে তামিম ইকবাল সাজঘরে ফিরে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য হয়ে যায় ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তুলেন মুশফিকুর রহিম। তাকে সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিঠুন। এই জুটিতে তারা ১৩২ রান সংগ্রহ করে।

মুশফিকের ষষ্ঠতম সেঞ্চুরি

১২ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠতম সেঞ্চুরি হাঁকালেন মুশফিকুর রহিম। শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী খেলায় শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক। শুধু সেঞ্চুরি করাই নয়, ২ রানে লিটন-সাকিব-তামিম (ইনজুরি) সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন মুশফিক। ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপদে পড়ে যাওয়া দলকে একাই টেনে তুলেন তিনি।

২০০৫ সালে টেস্ট ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয় মুশফিকুর রহিমের। পরের বছরের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়। এরপর থেকে জাতীয় দলের হয়ে ১৮৮টি ম্যাচ খেলে ৬টি সেঞ্চুরি এবং ২৯টি ফিফটির সাহায্যে ৩৩.৮২ গড়ে ৪ হাজার ৯৭২ রান সংগ্রহ করেন মুশফিক। ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও দারুণ খেলে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। টেস্টের সাদা পোশাকে জাতীয় দলের হয়ে ৬২টি ম্যাচ খেলে পাঁচটি সেঞ্চুরি এবং ১৯টি ফিফটিতে ৩৪.২৫ গড়ে ৩ হাজার ৬৯৯ রান সংগ্রহ করেছেন মুশফিক। আর টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে চরটি ফিফটির সাহায্যে মুশফিক করেছেন ১ হাজার ১৩১ রান।

বিদায় মাশরাফি, ভরসা মুশফিক

যোগ্য সঙ্গীর অভাব ভালোভাবেই অনুভব করছেন মুশফিকুর রহিম। মোহাম্মদ মিঠুনের মতো আর কেউই পারেননি মুশফিককে সঙ্গ দিতে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজরা পারেননি মুশফিককে সঙ্গ দিতে।সঙ্গীর অভাবে দলকে সেভাবে এগিয়ে নিতে পারছেন না জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক।

ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফেরার মিছিলে সর্বশেষ যোগ দেন অধিনায়ক মাশরাফি। ডি সিলভার বলে সজোরে ব্যাট চালাতে গিয়ে উপল থারাঙ্গার ক্যাচে পরিণত হন মাশরাফি। মুশফিককে রেখে মিরাজও ফিরে গেলেন যোগ্য সঙ্গীর অভাবে মুশফিকুর রহিম। মোহাম্মদ মিঠুনের মতো আর কেউই পারেননি মুশফিককে সঙ্গ দিতে। রিয়াদ ফিরেছেন ১ রান করে। তার বিদায়ের পর সাজঘরে নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মালিঙ্গার করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সৈকত।

প্রত্যাশা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংস মেরামতে মনোযোগ দেবেন। কিন্তু সুরঙ্গা লাকমলের বলে উইকেটের ওপর ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। নিচু হয়ে ওঠা বলটিকে তালুবন্দি করেন লাকমল। মিরাজ ফেরেন ১৫ রান করে। ১৭৫ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল।

বাজে শট খেলে মাহমুদউল্লাহ আউট

শুরুর ধাক্কা সামলিয়ে মুশফিক-মিঠুনের ব্যাটে ভালোভাবেই খেলায় ফেরে বাংলাদেশ দল। মিঠুনের বিদায়ের পর সেই ভালোর রেশ ধরে রাখতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আমিলা আপনসের স্পিন বলে কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রিয়াদ (১)।

ফিফটি গড়ে মিঠুনের বিদায়

প্রথম ওভারে ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর দ্বিতীয় ওভারে বাঁ-হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল।

মুশফিক-মিঠুনের মধ্যে ভালো বোঝা পড়া ছিল। তাদের ব্যাটে ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ দল। ইনিংসের ২৭তম ওভারে মালিঙ্গার বাউন্স বলে মিড উইকেটের উপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিঠুন।শুরুতে তিন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলে কোণঠাসা হয়ে যায় বাংলাদেশ দল। সেই অবস্থা থেকে দলকে উত্তরণ করেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়েন তারা। মালিঙ্গার তৃতীয় শিকারে পরিনত হওয়ার আগে ৬৮ বলে পাঁচ চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে ৬৩ রান করে ফেরেন মিঠুন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা তার প্রথম ফিফটি।

শুরুতেই বিপদে বাংলাদেশ দল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার লিটন দাস। তার বিদায়ের ঠিক পরের বলে ফিরেন সাকিব আল হাসান।

অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে বিপদে পড়েন লিটন। প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানেই ফেরেন এই ওপেনার। সাকিব কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন লাসিথ মালিঙ্গার বলে বোল্ট। মাত্র ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে একঘরে হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ দল।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post লিটল বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত ওয়াশার পানি ও পরিবেশ সংক্রান্ত সভা
Next post প্রেসিডেন্ট পুত্রের সঙ্গে বিরোধ, দল থেকে বহিষ্কৃত তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী
Close