Read Time:9 Minute, 45 Second

ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচন ঘিরে ভিন্ন এক আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে। আগে কখনো এমন আমেজ দেখা যায়নি। এমনকি গত বছরের সিটি নির্বাচনে জ্যামাইকা এলাকা থেকে কাউন্সিলম্যান প্রার্থী তৈয়বুর রহমান হারুনকে ঘিরেও প্রবাসীরা তেমনভাবে আবর্তিত হননি।

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্ণরসহ সিনেট ও এ্যাসেম্বলীর দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের এ নির্বাচন তথা প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। সে আলোকে অন্তত ৪ জনের নাম প্রকাশিত হয়েছে। সামনের নিউইয়র্ক সিটি ও স্টেট পার্লামেন্ট নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা ব্যক্ত করছেন। এরমধ্যে নারীও রয়েছেন একাধিক। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে নিশ্চয়ই এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে সকলের প্রত্যাশা। আর এভাবেই আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথ জোরালোভাবে সুগম হবে বলে উল্লেখ করেছেন মূলধারায় সরব ফখরুল আলম।

অপর সংগঠক কাজি মনির মনে করেন, কম্যুনিটি বোর্ডের মাধ্যমে প্রবাসীরা বহুজাতিক এই সিটিতে নিজেদের মেধা ও মননের প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন। এই অভিজ্ঞতার পথ বেয়েই উপরে উঠতে হবে জোর কদমে।

নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা-ফ্লাশিং এলাকা থেকে স্টেট সিনেটে দলীয় মনোনয়ন লাভের পথে হাঁটা জন লু-কে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়েছেন প্রবাসীরা। নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার হিসেবে এশিয়ানদের প্রতিনিধিত্বকারি জন লু এর আগে কাউন্সিলম্যান ছিলেন। কম্পট্রোলারের পদ ছেড়ে সিটি মেয়র পদে দাঁড়ানোর পর গতানুগতিকভাবে তাকে হয়রানির পথ অবলম্বন করা হয়েছিল। যদিও কোনই লাভ হয়নি। অভিবাসী সমাজের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে এবার মাঠে নেমেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে।

ইতিমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ানদের প্রতিনিধিত্বকারি ‘আসাল’র সমর্থন লাভে সক্ষম হয়েছেন জন লু। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা মূলধারায় সরব তারাও কাজ করছেন জন লু-কে জয়ী করার জন্যে। অভিবাসী সমাজের বন্ধু হিসেবে জন লু চাচ্ছেন ট্রাম্পের অ-আমেরিকান পদক্ষেপ রুখে দিতে এবং খেটে খাওয়া অভিবাসী সমাজের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে যথাযথ আইন তৈরির জন্য।

২৭ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে মেজবান দরবার হলে কম্যুনিটি লিডার ও মূলধারার সংগঠক ফখরুল আলমের সঞ্চালনায় ‘মীট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জন লু বলেন, ‘অভিবাসীদের সকল অধিকার সংহত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। এতদসত্বেও ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর নিউইয়র্কের মসজিদসহ মুসলমানদের ওপর গোপনে নজরদারির প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছিল নিউইয়র্কের পুলিশ। আমি সে সময় সিটির কম্পট্রোলার ছিলাম। সেটিকে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থিই শুধু নয়, নিউইয়র্ক সিটির ঐতিহ্যকেও ভুলুন্ঠিত করার সামিল বলে আপত্তি করি। সে আপত্তির ফলশ্রুতিতে পুলিশ প্রশাসন বাধ্য হয়েছে নজরদারি থেকে সরে দাঁড়াতে। পরবর্তীতে নানাভাবে আমাকে এর খেসারত দিতে হয়।’

জন লু উল্লেখ করেন, ‘কম্পট্রোলারের দায়িত্ব শেষে আমি সিটি মেয়র পদে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু মুসলমান তথা ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অভিবাসী সমাজের পক্ষে কথা বলার কারণে সংঘবদ্ধভাবে আমাকে আক্রমণের ভিকটিম হতে হয়। নানা অপবাদ দেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে কোনকিছুই ধোপে টিকেনি।’

জন লু ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমি অভিবাসী হিসেবে কেন মেয়র হতে চেয়েছিলাম-এটি ছিল আমার অপরাধ। এসব বিষয়কে হৃদয়ে সযত্নে লালন করেই সম্মুখে এগুতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ান তথা এশিয়ানসহ অভিবাসী সমাজের পক্ষে ছিলাম, সামনের দিনেও থাকবো-এটি হচ্ছে আমার বড় অঙ্গিকার।’

মূলধারায় বাংলাদেশিদের পথিকৃত মোর্শেদ আলম বলেন, ‘২০ বছর আগে এই স্টেট সিনেটে আমি লড়াই করেছি। সে সময়ে অনেকের তা সহ্য হয়নি। এমনকি বাংলাদেশিরাও অনেকেই আমাকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিতে সীমাহীন কৃপনতা প্রদর্শন করেছেন। এবার জন লু প্রার্থী হয়েছেন। তাকে ঘিরে সে ধরনের কৃপণতা আশা করি দেখা যাবে না। সে আশায় থেকেই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে জন লু বিপুলভাবে বিজয় পাবে বলে আশা করছি।’

নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ডেমক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে ট্রাম্প প্রশাসনের কোন অ-আমেরিকান নীতিকেই এই সিটিতে বলবৎ করা সম্ভব হবে না। তাই প্রাইমারিতে বাংলাদেশি তথা অভিবাসী সমাজের পরীক্ষিত বন্ধু ডেমক্র্যাটদের বিজয় প্রদানে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান ফখরুল আলম।

ক্যাটালিনাকে আসালের এনডোর্স:
কুইন্সের এ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ এ ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নের লড়াইয়ে অবতীর্ন ক্যাটালিনা ক্রুজকে এনডোর্স করেছে অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার তথা আসাল। শনিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি চায়নিজ হলে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন দক্ষিণ এশিয়া প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন আসাল’র প্রতিষ্ঠাতা এবং ন্যাশনাল কমিটির প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন। ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে এটর্নী ক্যাটালিনা ক্রুজকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

মূলধারায় বাংলাদেশীদের পথিকৃত মোর্শেদ আলমের সভাপতিত্বে এবং আসাল কুইন্স চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আসালের ন্যাশনাল সেক্রেটারি করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, নিউইয়র্ক সিটি ভোটার এ্যাসিসটেন্স কমিশনার মাজেদা এ উদ্দিন, আসালের কুইন্স চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাবুল উদ্দীন, ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর রুবাইয়া রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর ফারুক, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শিরিন আক্তার, মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবুল, কাজী মনির প্রমুখ।

জেসিকা র‌্যামোসকে সমর্থন:
জ্যাকসন হাইটস, করোনা, ইস্ট এলমহার্স্ট, এস্টোরিয়া নিয়ে গঠিত নিউইয়র্ক সিনেট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে অবতীর্ণ জেসিকা র‌্যামোসকে সমর্থন জানিয়েছে নিউ আমেরিকান ভোটার এসোসিয়েশন তথা নাভা। শনিবার জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক র‌্যালিতে এই ঘোষণা প্রদানের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দিলীপ নাথ, রোকেয়া আকতার, মিলন রহমান, মনিকা রায় প্রমুখ।
এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে অভিভূত জেসিকা বলেন, আপনাদের যে সমর্থন পেলাম তা আমার শক্তি বাড়িয়ে দিল। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র, কম্পট্রোলারসহ বিশিষ্টজনরা সমর্থন দিয়েছেন। বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমসও সমর্থন দিয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের নেপথ্যে বাংলাদেশি
Next post মাদ্রিদে প্রবাসীদের মিলনমেলা
Close