Read Time:8 Minute, 14 Second

লাখ ডলারে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি পদ। এর আগেও এমন হাঁকডাকের তথ্য বাজারে ছড়িয়েছিল। লন্ডন এবং ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা হাইকমান্ডের বিশেষ লোকজন নানা আশ্বাসও দিয়েছেন। বিনিময়ে নগদ-নারায়ণের পাশাপাশি দামি জিনিসপত্র গ্রহণের গুঞ্জনও উঠেছে বেশ কবার। তবে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি গত পাঁচ বছরেও।

এবার এমন কিছু মানুষ এই লাখ ডলারের ব্যাপারটি বাজারে ছেড়েছে, যাদের পরিচয় দেওয়ার মতো কোনো পেশা নেই, এমনকি বৈধভাবে কাজের অনুমতিও নেই। এরা জীবিকা চালায় দলবাজি করে। কখনো লন্ডন, আবার কখনো গুলশানের দোহাই দিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত লোকজনেরাও এদেরকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। নেতৃত্ব পেতে আগ্রহীদের ধারণা, এরাই তারেক রহমানের আস্থার লোক, এরাই হাই কমান্ডের নির্দেশে ভিতরে ভিতরে অনেক কাজ করেন।

লাখ ডলারের টোপ দেওয়ার ব্যাপারটি নিউইয়র্কের গণ্ডি পেরিয়ে নিউজার্সি হয়ে পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন মেট্রো, মিশিগান, ফোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি হয়েছে, সভাপতি পদের জন্য লাখ ডলার কোনো ব্যাপারই নয়। তবে গ্যারান্টি থাকতে হবে নতুন কমিটির। ২০১৩ সালে আবদুল লতিফ সম্রাটের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর বেশ কয়েকবার লন্ডন ও ঢাকা থেকে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক থেকে শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই এসে তালিকা সংগ্রহ করেছেন। সমঝোতা বৈঠকের ঘটনাও ঘটেছে। পৃথক পৃথকভাবে বৈঠকে বসে সবার মতামতও নেওয়া হয়েছে।

‘শিগগিরই আসছে কমিটি।’ ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা লন্ডন থেকে ঢাকায় গুলশানের অফিসে গেছে।’ ‘মহাসচিবের অনুমোদনের পর তা ম্যাডামের টেবিলে।’ ইত্যাদি কথা রটানো হয় বহুবার। এ জন্য এবার আর কেউই বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না নতুন কমিটির ব্যাপারে।

লাখ ডলারের প্রয়োজনের পক্ষে যুক্তি দেখানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক লবিংয়ের। বাংলাদেশের চলমান সংকটে ব্রিটিশ, আমেরিকাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে লবিং চালাতে বিপুল অর্থ প্রয়োজন। সে অর্থ তারেক রহমানের কাছে নেই বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।

লাখ ডলারের হাঁকডাক সম্পর্কে সাবেক সভাপতি আলহাজ আবদুল লতিফ সম্রাট বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নেহায়েতই গুজব। সর্বশেষ কমিটি তারেক রহমান নিজেই বাতিলের কথা জানান লন্ডনে ডেকে নিয়ে। এরপর তিনি নিজেই নাম সংগ্রহ করেন। আজ অবধি কমিটি আসেনি। আমার মনে হচ্ছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লাখ ডলারের গুজব ছড়িয়ে তারেক রহমানের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্রাট উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছর অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর অনেক দেশ ও জেলায় নতুন কমিটি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কমিটির ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন একটি অবহেলা কাজ করছে বলে আমার মনে হয়। এ জন্য মাঠের কর্মীরাও হতাশ। অথচ স্বৈরাচার ও সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তার প্রভাবও দেখেছি সবাই।

সম্রাট আরও বলেন, হাইকমান্ডকে কমিটির কথা বললেই তারা ঠুনকো অজুহাত দেখান গ্রুপিংয়ের। বিএনপির মতো বড় একটি দলে গ্রুপিং থাকবেই। কমিটিতে তো সবাইকে সভাপতি অথবা সেক্রেটারি বানানো যাবে না। কেউ না কেউ অখুশি হবেনই।

লাখ ডলার প্রসঙ্গে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে বিলুপ্ত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বাংলাদেশ পাবলিক এয়োর্স ফ্রন্টের সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, নতুন কমিটির অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। আর এ সুযোগেই নানা রটনা হচ্ছে। এর কোনটি সত্য আর কোনটি গুজব-কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, হাই কমান্ড নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তা হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। অতীতেও যোগ্যতার ভিত্তিতেই কমিটির অনুমোদন এসেছিল।

সাবেক অন্যতম সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ কমিটির ব্যাপারে কোনো গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি হবে। তাই এখানে গুজব-গজবের অবকাশ নেই। ফায়দা হাসিলের জন্য কেউ কেউ এমন অপপ্রচার চালাতে পারে। সেটি আমলে না নিয়ে বিএনপির এই চরম সংকটকালে মূল ধারায় কাজের বিকল্প নেই। আমরা সে পথেই হাঁটছি।

সাবেক অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক, তারেক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও মূলধারার রাজনীতিক আকতার হোসেন বাদল বলেন, চেয়ারপারসকে সাজানো মামলায় জেলে নেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী এমন অপবাদ রটাচ্ছে বলে আমি মনে করছি। তবে বিএনপির কমিটির নামে ইতিপূর্বে ঢাকা ও লন্ডন থেকে যারা এসেছিলেন, তারা নানা টোপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন হাই কমান্ডের নামে। সে সময় ব্যক্তিগতভাবে আমি লন্ডনে যোগাযোগ করে জেনেছি ওইসব নেতা নিজ দায়িত্বে কমিটির আশ্বাস দিয়ে গেছেন। এখনো সুবিধাবাদীরা মাঠে নেমেছে। তারেক রহমানের ইমেজ বিনষ্টের জন্য লাখ ডলারের কথা বাজারে ছেড়েছে। বিএনপির নীতি-আদর্শে বিশ্বাসীরা কখনোই এমন টোপে পা দিতে পারেন না। তারা আশা করছেন, আগের মতো এবারও যোগ্য নেতৃত্বে নয়া কমিটির অনুমোদন আসবে।

বিএনপি নেতা পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, কিছু লোকের কাজই হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে আখের গুছিয়ে নেওয়া। এখনো সেটি করা হচ্ছে। আমরা এখন মাঠে রয়েছি। নিশ্চয়ই সে মূল্যায়ন হবে। পদ-পদবি ছাড়াই আমরা কাজ করছি-এটি হচ্ছে যোগ্যতা যাচাইয়ের সর্বোত্তম পন্থা।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মালয়েশিয়ায় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফাঁসির দাবি
Next post ফোবানা লস এঞ্জেলেস
Close