Read Time:8 Minute, 2 Second

গত ৭ এবং ৮ জুলাই  ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের  অন্যতম জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বৃহৎ ‘বৈশাখী মেলা’। হাজার হাজার দৰ্শকের উপস্থিতিতে এই মেলায় মানুষের ঢল নামে। সুদীর্ঘ ১৭ বছর যাবত লস এঞ্জেলেসের এই মেলা এক বিরাট মাইলফলক হয়ে আছে। যা এবার ১৮ বছরে পদার্পণ করল।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আমাদের নতুন প্ৰজন্ম এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।  যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্টেট থেকে বাঙ্গালীরা এই বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণ করেন। এ যেনো বাঙালীর মিলন মেলা। বৈশাখীর সাজে রমনীরা সেজেছিল অপূর্ব রুপে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এবং কিশোর কিশোরীদের পদচারনায় মেলা মুখরিত হয়ে উঠে। নানা বয়সের সবার আড্ডায় মেলা জমজমাট হয়ে উঠে। এই প্রথমবারের মত  লস এঞ্জেলেসের কোন মেলায় সংযোজন করা হয় লেড স্ক্রীনে যা কিনা মেলার  যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা গিয়েছিল। বাংলাদেশের  চারুকলা ইনসটিটউট  থেকে মেলায় জন্য আনা হয়েছিল জাতীয় কবি, লেখক, বরেণ্য ব্যক্তিদের সব ছবি। যা আমাদের জাতীয়তার পরিচয় বহন করে। ছিল পনকজের সুনিপুণ হাতের কারুকাজে বৈশাখীর চিএকর্ম। যারা এই মেলায় এসেছিলেন সবারই মুখে এইসব নতুন সংযোজন ভূয়সীভাবে প্রশংসিত হয়। যা কিনা লস এঞ্জেলেসের ইতিহাসে সর্ব প্রথম।

২ দিন ব্যাপি এই মেলার ১ম দিনে অন্যতম আকর্ষন ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী গায়ক সৈয়দ আব্দুল হাদী। শনিবার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন লস এঞ্জেলেসের জনপ্রিয় সব শিল্পীরা। বাংলাদেশ একাডেমির শিল্পীদের গান দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারা ছিলেন নাহিদ শীরাজী, হাসিনা পারভীন, বুলবুল, কাবেরী রহমান, পলাশ আহমেদ, নাসরিন হাসান, কবিতা ও শিমুল বডুয়া, পন্থ বডুয়া। এরপর লস এঞ্জেলেসের যেসব জনপ্রিয় শিল্পীরা গান করেন তারা হলেন- রেহানা মল্লিক, শিল্পী রহমান, পূনতা, এ্যানি জিলানি।

“ফ্রিডমএজ” ব্যান্ড চমৎকার সঙ্গীত পরিবেশন করে। অ্যারিজোনা থেকে এম এ শোয়েব। সুদূর নিউইয়র্ক থেকে পমি তাজ ও রায়ান তাজ। রায়ান তাজের গান পরিবেশনার সময় দৰ্শক নেচে গেয়ে আনন্দের মাতোয়ারা হয়ে যায়। তার পরই আসেন কিংবদন্তির গায়ক সৈয়দ আব্দুল হাদী। তার সাথে ছিলেন কন্যা তনিমা হাদী। তাদের গানের সুরের মূর্ছনায় দৰ্শক বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। করতালীতে মেলার মাঠ মুখরিত হয়ে উঠে। বাংলা গানের জগতের পথিকৃত কে পেয়ে দর্শকদের মাঝে আনন্দের উত্ফুল্লতা দেখা যায়।

পুরনো এবং আধুনিক গানের অপূর্ব সংমিশ্রনকে সবাই দারুন উপভোগ করেন। মেলার দ্বিতীয় দিনে অন্যতম আকর্ষন ছিলেন ভারতের ইন্ডিয়ান আইডল খ্যাত অনুষ্ঠানের ফাইনালিস্ট গায়িকা পূজা চ্যাটার্জি।

দ্বিতীয় দিনের বৈশাখী মেলায় দলীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানে সূচনা হয়। দলীয় সঈীতে অংশগ্রহণ করেন সাজিয়া হক মিমি, রেহানা মল্লিক, রতনা পল, তৃষা নন্দী, সাদিয়া রহমান, রানী, সুধা, তানি, মেজর কুতুবী, সিদ্দিকুর রহমান সোনালী, বিলকিস, জয়া। এরপর গান করেন লস এঞ্জেলেসের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্য ছিলেন সাদিয়া রহমান, সাজিয়া হক মিমি, মেজর কুতুবী, সোনিয়া বডুয়া খুকু, শায়লা রুমি।

মেলার বিশেষ আকর্ষন ছিল বাউল দল “মন পবন“ এর পরিবেশনা। তাদের চমৎকার পরিবেশনায় দেশের গান, মাটির গান গেয়ে দর্শকদের মন কেড়ে নেন। এরপর মেলার অন্যতম আকর্ষন ছিল কিশোর কিশোরীদের ফ্যাশন শো। পুরাতন গানের সাথে আধুনিক গানের পোশাক এবং সঙ্গীতের যে পরিবর্তন তা তুলে ধরা হয়েছে।

দর্শকদের বিপুল করতালীর মাধ্যমে সবার মন কেড়ে নেয়। এই ফ্যাশন শো’র সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন জেসমিন ইব্রাহিম। করিওগ্রাফ করেন ইশরাত (ইসু্), সহযোগিতা ছিল এলিন ও শীজা। এতে অংশগ্রহণ করে এলিন ফাতিহা, সেরা হক, আনিশা, প্রভা, ইসু্, জেনিফার, আলিফ, অলি, আইমেন, রাকিব, অরিএ, উমায়জা, পূনতা, শিসির, আানিয়া, শীজা, শেখ জিবরান।

এরপর দলীয় নূত্য অংশ নেন লিপা, মবি, হ্যাপি, পপি। এরপর চ্যানেল আই এর সেরা কন্ঠের গায়িকা মারিয়া আক্তার মৌ দশকদের গানে গানে ভরিয়ে রাখেন। সবশেষ পরিবেশনা ছিল ভারতের ইন্ডিয়ান আইডল খ্যাত অনুষ্ঠানের ফাইনালিসট গায়িকা সূদুর ভারত থেকে পূজা চ্যাটার্জি। তার অপূর্ব দরাজ কন্ঠের গানের সাথে দৰ্শক আনন্দে নেচে উঠে। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানটি মাতিয়ে রাখেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন লস এঞ্জেলেসের একজন অন্যতম জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সাজিয়া হক মিমি এবং জনপ্রিয় উপস্থাপক আশরাফ আহমেদ মিলন। মনোরঞ্জক এই সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির পরিচালনার  করেন সিদ্দিকুর রহমান, হুমায়ুন কবির এবং ঢালী  রসিদ দিপু। বাদ্যযন্ত্রে সহযোগিতা করেন “স্বরাজ ব্যান্ড”।

বৈশাখী মেলার প্রধান আবুল ইব্রাহিম এবং মেলার এই বছরের কনভেনর সাইদুল হক সেন্টু  সবাইকে ধন্যবাদ জানান। মেলার চিফ এ্যাডভাইজার ড. জয়নুল আবেদিন মেলাকে সাফল্যমন্ডীত করতে এবং সংস্কৃতিক জগতে অবদানের জন্য বৈশাখী মেলা কমিটির পক্ষ থেকে সৈয়দ আব্দুল হাদী, তনিমা হাদী, পূজা চ্যাটার্জি , মারিয়া আক্তার মৌ, রায়ান তাজ, পমি তাজ, সাজিয়া হক মিমি, আশরাফ আহমেদ মিলন, সিদ্দিকুর রহমান, কাজী মানিক, শহীদ আহমেদ মিঠুর হাতে এ্যপরিসিয়েসন এওয়াড তুলে দেন।

পরিশেষে রাফেল ড্র  বিতরনের মাধ্যমে মেলার পরিসমাপ্তি টানা হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ফুল ও খাবার ছাড়া অন্য উপহার নেওয়া নিষিদ্ধ: মাহাথির
Next post মিয়ানমার ও লাওসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
Close