Read Time:12 Minute, 53 Second
আহমদ কবির :
আমার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন থেকেই লস এঞ্জেলেসের ‘বালা’র ইতিহাস নিয়ে লিখবো। অনেকের সাথে আলাপ করে ভাল সাড়াও পেয়েছিলাম আবার অনেক সমস্যা হবে সেটাও বুঝতে পারছিলাম।সমস্যার সিংহভাগ হল আমাদের ‘আমিত্ত’ বালার খেলোয়াড়রা শুধু আমি আর আমি ছাড়া আর কিছু বুঝেন না এবং যখনই ‘বালা’র নাম নিয়ে কিছু করতে যাওয়া হয় তারা তাদের ঐ অতীতের রাজনীতি শুরু করে দেন।তারপরও সকলের সাথে কথা বলে বালা’র ইতিহাস লিখার ইচ্ছা আছে আগামীতে। তবে আজকের বর্তমান বালা’কে নিয়ে লিখছি,যদিও আনেকেই হয়তো জানেন না বালা’কে সক্রিয় করার একটি চেষ্টা নেয়া হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে।
বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ লস এঞ্জেলেস (বালা) লস এঞ্জেলেসের একটি পুরাতন সংগঠন, অনেকের মতে ১৯৭১ সালে বালার জন্ম এই শহরে।আমরা যখন ৮০’র দশকে এই শহরে আসি তখন প্রয়াত শহিদুল্লাহ ভাইকে বালা’র সাথে জড়িত দেখি।তারপর হামিদ ভাই, জামি ভাই, বাচ্ছু ভাই, ইশতিয়াক ভাই সহ লস এঞ্জেলেসের অনেকেই বালা’র হাল ধরেন।লস এঞ্জেলেসের প্রবাসীদের সকল ধরণের সহযোগিতায় বালা’কে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে।বালা লস এঞ্জেলেসে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে উঠে এবং সেই সাথে অনেকেই বালা’র নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেন যার পরিণতি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় বালা’র কার্যক্রম দীর্ঘ দিনের জন্য।আমার আজকের লিখা আদালত পরবর্তী বালা’কে নিয়ে।
বেশ কয়েক বছর আগে কাজী মাশহুরুল হুদা (হুদা ভাই) আমাকে বললেন উনি বালা’কে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন এবং তারপরেই উনার খবরের কাগজে বালা নিয়ে বেশ লেখা-লিখি শুরু করেন। বাংলাদেশী সমাজে বেশ সাড়াও পাওয়া যায়,শুরু হয় সভা আর সমঝোতার উদ্দ্যেগ বালা’র পুরাতন খেলোয়াড়দের নিয়ে। ডঃ বি ডি খানকে প্রধান ইলেকশন কমিশনার করে একটি ইলেকশন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচনের জন্য নমিনেশন গ্রহনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।আমার জানা মতে নমিনেশন গ্রহনের একটি স্থান ছিল তৎকালীন তাওরাত রেস্টুরেন্ট।হুদা ভাই আমাকে তাওরাতে যেতে বললো, ঐ দিনই বাচ্চু ভাই এবং শামীম ভাই বললো উনারা নমিনেশন জমা দেবে। সন্ধ্যার পরে তাওরাতে আমি এবং শাহ নজরুল উনাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, দেরী দেখে বাচ্চু ভাইকে ফোন করলাম, শামীম ভাই বললো উনারা আসছে, আবার ফোন করা হল, মিতু ভাই ফোন ধরে বললো আসছে।শাহ নজরুল বললো আপনারা না আসলে আমরা নমিনেশন জমা দিয়ে দিচ্ছি।উনারা বললেন, আমরা আসলে একসাথে জমা দেবেন।এখানে উল্ল্যেখ্য আমাদের জালালাবাদের কোন্দল বালা’র মধ্যেও খেলা শুরু করে দিয়েছে।বাচ্চু ভাই, শামীম ভাই বা মিতু ভাই কেউই আর আসলো না তখন শাহ নজরুল বললো সহ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নমিনেশন জমা দিয়ে একটা নির্বাচন করানোর রাস্তা খোলা রাখতে। ইতিমধ্যে শামসুল আলমকে দেখা গেলো তাওরাতে বসে  জনৈক নির্বাচন কমিশনারের(সহ) সাথে বার বার আলাপ করতে। ইশতিয়াক ভাইকেও দেখা গেলো শামসুল আলম ও কমিশনারের সাথে বার বার আলাপ করছেন।যখন কেউ তাওরাতে নমিনেশন জমা দিল না তখন শুনা গেলো শামসুল আলম সভাপতির পদে নমিনেশন জমা দিয়েছেন।নিয়ম অনুযায়ী নমিনেশন সিল করা থাকবে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিল খুলে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু তাওরাতেই সহ কমিশনাররা নমিনেশন খুলে বিজয়ী ঘোষণা দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করলেন।তারপরও বালা’র পুনর্জন্ম হল, শামসুল আলম বালা’র সভাপতি নির্বাচিত হলেন দীর্ঘ দিন পর।এইভাবে প্রায় ৬/৭ বছর বালা’র আর কোন নির্বাচন ছাড়াই শামসুল আলম সভাপতি হিসাবে কাটিয়ে দিলেন, বালা’কে সক্রিয় হতে তেমন দেখা যায় নি।এখানে উল্ল্যেখ্য যে বালা’র সভাপতি শামসুল আলম হলেও বালা’র রেজিস্ট্রেশন ছিল সাইয়েদ  আবেদ সাহেবের নামে।
গত ২০১২ সালে বালার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গেলো এবং বেশ কিছু দিন বাতিল হয়েই থাকলো।আমি আমার নামে আবার রেজিস্ট্রেশন করলাম, হাতে ডক্যুমেন্ট আসার পরে আমি প্রথমেই ফোন করি বালা’র ৭ বছরের সভাপতি শামসুল আলমকে। শামসুল আলম সাহেবকে আমি বললাম যে আমি বালা’র রেজিস্ট্রেশন করেছি, উনি যদিও সভাপতি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে কিন্তু লস এঞ্জেলেসের অনেকেই উনাকে বা উনার কমিটিকে গ্রহণ করে নি তাই উনাকে প্রস্তাব দিলাম উনি যদি নিজে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন এবং নতুন কমিটির কাছে বর্তমান সভাপতি হিসাবে দায়িত্ত হস্তান্তর করেন তাহলে উনার কমিটি এবং উনাকে বাধ্য হয়েই সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। লস এঞ্জেলেসে যারা আছেন তাদের অনেকেই জানেন এই শহরে দু’জন লোকের সাথে কথা বলা অসম্ভব, একজনের নাম নাই বললাম তবে অন্যজন এই শামসুল আলম সাহেব। উনি আমার  কথা শেষ করতে দিলেন না, ভিবিন্ন ধরণের ইতিহাস শুরু হয়ে গেলো।অনর্গল কথা বলতে লাগলেন এবং এক পর্যায়ে বললেন আমি নাকি এই বালা’কে “বা.ফালা”র কাছে নিয়ে দেবো।উনি আমার কোন এক বন্ধুকে “বা.ফালা”য় যেতে সাহায্য করেছিলেন এবং আমার সেই কথিত বন্ধু নাকি এখন রাজাকার হয়ে গেছে।আমি বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কে সেই বন্ধু কিন্তু উনি অনর্গল আজে-বাজে কথা বলেই যাচ্ছিলেন।এক পর্যায়ে যখন উনি আমার বন্ধুর নাম বললেন তখন আমি উনাকে বললাম আপনি ত সেই লোক যে ঐ কথিত বন্ধুর প্ররোচনায় আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট অনেক কিছুই লিখেছিলেন ‘কাগজ’ পত্রিকায়।তা, হুট করে আপনার এত ঘনিষ্ঠজন এখন আমার বন্ধু হয়ে গেলো তাও আবার রাজাকার? উনি সাথে সাথে বললেন উনার একটা কল এসেছে আমাকে পরে কল দেবেন।
আমি কিছুদিন অপেক্ষা করে উনাকে কল দিলাম, উনি আবারও একই কথা বলতে লাগলেন এবং এক পর্যায়ে বললেন আমাকে উনি ফেইস বুক থেকে আন-ফ্রেন্ড করে দেবেন বলে ফোন কেটে দিলেন।আমি এখনও মনে করি উনাকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা উনার এবং বালা’র জন্য ভাল ছিল কিন্তু  উনি যে আজীবন বালা’র সভাপতি থাকতে চান তা আমার জানা ছিল না।
আমার দ্বিতীয় কল কাজী মাশহুরুল হুদা ভাইকে, কারণ উনিই বালা’কে নিয়ে নাড়া-চাড়া করে দাড় করাতে পারেন নি তাই ভাবলাম উনি হয়তো এই সুযোগ কাজে লাগাবেন এবং বালা’কে আবার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন।উনি আমার কাছ থেকে বালা’র খবর পেয়ে খুব খুশীই হলেন, অবশ্য আমি উনাকে বলেছিলাম যে আমি প্রথমে বালা’র সভাপতি শামসুল আলম সাহেবকে ফোন দিয়েছিলাম। হুদা ভাই প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার সভাপতি হিসাবে আসার কোন ইচ্ছা আছে কি না। আমি উনাকে পরিস্কার জানিয়ে দিলাম যে আমার নাম কোথাও ব্যবহারই করবেন না, শুধু বালা’কে দাড় করান। উনাকে আরো বললাম যে বালা’কে লস এঞ্জেলেসের তরুণদের মধ্যে ছেড়ে দিতে নির্বাচনের মাধ্যমে। উনি বললেন, আপনি যেহেতু থাকবেন না আমি এটা নিয়ে একটু নাড়া-চাড়া করি।
হুদা ভাইয়ের তেমন নাড়া-চাড়া করতে হয়নি, উনি বালা’কে এক পকেট থেকে আরেক পকেটে ডুকিয়ে দিলেন।বাফলা এবং বাফলা থেকে বহিস্কার হওয়া কতক সদস্যদের হাতে তিনি বালা’কে তুলে দিলেন।কোন নির্বাচন ছাড়াই কমিটি হল এবং এটাই স্বাভাবিক কারণ যাদের হাতে হুদা ভাই বালা’কে তুলে দিলেন তাদের নির্বাচনের কোন চর্চা ছিল না যে সংগঠন করেছেন বা বহিস্কার হয়েছেন,  আমাকে তাদের সভায় ডাকা হল। আমি উনাদেরকে বললাম আমার নাম কোথাও ব্যবহার না করতে এবং আমার কমিটিতে থাকার কোন ইচ্ছে নাই। আমার একটাই ইচ্ছা ছিল বালা’কে আবার সংগঠিত করা।শ্রদ্ধেয় ডঃ সিরাজুল্লাহ ভাইকে সভাপতি করে অভিষেক করা হল শ্যাটো রিক্রিয়েশন সেন্টারে, ম্যাগাজিনের এক জায়গায় আমার নাম দেখে সভাপতিকে আমার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ছিলাম। ২০১৫ সালে কমিটি হওয়ার পর বালা’র আর কোন নির্বাচন হয়নি, শ্রদ্ধেয় ডঃ সিরাজুল্লাহ ভাইয়ের কোন ইচ্ছা নাই সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আর যদি সরে দাড়াতেই হয় তবে উনারই পছন্দের একজনকে কোন নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি করে কমিটি করা হবে।হুদা ভাইকে আমি বলেছিলাম নির্বাচন দিয়ে বালা’কে সংগঠিত করতে কিন্তু উত্তরে উনি বলেছিলেন ‘তাহলে বালা’র নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে’।আজ প্রায় ৩/৪ বছর হয়, বালা’কে সংগঠিত করার কোন প্রয়াস দেখা যায়নি, যারা আছেন তারা কোন ভাবেই পদের লোভ ছাড়তে রাজি নন কারণ কি তা হয়ত উনারাই জানেন।তবে বালা’র ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি, এক পকেট থেকে শুধু আরেক পকেটে স্থানান্তর করা হয়েছে।বালা’র বর্তমান অবস্থার জন্য হুদা ভাই দায়ী, মাঝে মাঝে মনে হয় হুদা ভাইয়ের কোন দিনও হয়ত বালা’কে পুনঃসংগঠিত করার ইচ্ছা ছিল না, ছিল নিয়ন্ত্রণ করার।তাই বর্তমান বালা পরিনত হয়েছে কিছু কিছু পদ লোভী ব্যক্তির লিভিং রুম বা কিচেন সংগঠনে আমাকে বেশ কয়েকজন জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কেন বালা’কে এনে উনাদের হাতে তুলে দিলাম নির্বাচন না দিয়ে, তাদেরকে প্রশ্ন ছিল যুক্তিসঙ্গত। ধন্যবাদ।

 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সৌদি আরবের জেদ্দায় বাস উল্টে ১১ বাংলাদেশি নিহত
Next post অহংকারি ডোনাল্ড ট্রাম্প
Close