Read Time:6 Minute, 28 Second

নিউইয়র্ক পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় ধরনের সংঘাত থেকে রেহাই পেল চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যরা। আর এভাবেই ভন্ডুল হল এক পক্ষের সংবাদ সম্মেলন।

স্থানীয় সময় ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। যথারীতি সেলিম তার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা শুরু করেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই সভাপতি আব্দুল হাই জিয়া গ্রুপের লোকজন সেখানে এসেই চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘সভাপতির অজ্ঞাতে কোন সংবাদ সম্মেলন হতে পারে না।’ এ কথা বলার সাথে সাথে তার সমর্থকরা একযোগে মঞ্চে উঠার চেষ্টা করলে তুমুল-বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার খুলে নেন জিয়ার সমর্থকরা।

এ অবস্থায় কিংকতর্ববিমূঢ় সেলিম মঞ্চে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তার সমর্থকরা ধাক্কা-ধাক্কি আর গালাগালিতে লিপ্ত হন প্রতিপক্ষের লোকজনের সাথে। মুহূর্তেই রনক্ষেত্রে পরিণত হয় জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টার।

সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন পার্টি সেন্টারের দুই মালিক কামরুল এবং হারুন ভূইয়া। হাঙ্গামায় লিপ্ত সকলকে অনুরোধ জানান শান্ত হবার জন্যে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি ঘটে এবং পুলিশের আহবানে সকলেই ওই স্থান ত্যাগ করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সভাপতি আব্দুল হাই জিয়া এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘সমিতির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৪৪ হাজার ৬২২ ডলার সরিয়েছেন সেক্রেটারি মো. সেলিম ও কোষাধ্যক্ষ মীর কাদের রাসেল। সমিতির ব্যাংক একাউন্ট থেকে এই অর্থ তারা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সরিয়েছেন। এখন তারা আমার অজ্ঞাতে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যদের বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছিলেন’।

‘চট্টগ্রাম সমিতির ব্যানার ব্যাবহারের কোন সুযোগ অন্যদের নেই বলেই আমরা বাধা দিলাম’-উল্লেখ করেন জিয়া।

অপরদিকে, সমিতির সেক্রেটারি মো. সেলিম বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমিতির ভবিষ্যত মর্যাদার কথা চিন্তা করে আমরা এতদিন মিডিয়ার সামনে কিছু বলিনি। আজ সময় এসেছিল সমিতির ভেতরে অপতৎপরতায় লিপ্তদের মুখোশ উন্মোচনের। কিন্তু তা সম্ভব হলো না সন্ত্রাসী আচরণের কারণে।’

প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম চট্টগ্রাম সমিতির মালিকানাধীন একটি ভবন রয়েছে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে। ৪ তলা বিশিষ্ট এই ভবনের এপার্টমেন্ট থেকে মাসিক ভাড়া আদায় হয় ৭ হাজার ডলারের অধিক। এই অর্থই হয়েছে সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যেকার হিংসা-বিদ্বেষের অন্যতম কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন।

সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানান, ‘সাবেক সভাপতি কাজী আজমের মদদে বর্তমান সেক্রেটারি মো. সেলিম এবং কোষাধ্যক্ষসহ কয়েকজন ভুয়া ভাউচারে সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিপ্রায়ে ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৪৪ হাজার ৬২২ ডলার সরিয়েছেন। এর কয়েক বছর আগে কাজী আজম দায়িত্ব পালনকালীন সময়েও বিপুল অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। সেই হিসাব এখনও পাননি সদস্যরা।’

অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী আজম পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘মোহাম্মদ হানিফের কারণেই চট্টগ্রাম সমিতি আজ খন্ড-বিখন্ড হয়ে পড়ার পথে। এথেকে উদ্ধারের জন্যে দরকার দক্ষ নেতৃত্ব।’ ‘আমিও চাই সমিতির আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব’-উল্লেখ করেন কাজী আজম।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সমিতির ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে সভাপতি আব্দুল হাই জিয়া অভিযোগ করেছেন যে, কাজী আজমের মদদেই সমিতির অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই আদালতে যাবো।

গত বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয় সমিতির নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দুটি প্যানেল মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ‘জাহাঙ্গির-বিল্লাহ প্যানেল’ নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের অভিযোগ করেন ‘জাহাঙ্গির-বিল্লাহ প্যানেল’র কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় ‘‘জিয়া-সেলিম প্যানেল’কে একতরফা বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সেই ‘জিয়া-সেলিম প্যানেল’র মধ্যেও এখন বিভক্তি দেখা দেয়ায় চট্টগ্রাম সমিতির অস্তিত্ব বিলীন হবার উপক্রম হয়েছে বলে প্রবীন প্রবাসীরা আশংকা করছেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post রিডার্স এন্ড রাইটার্সের আহবান
Next post যুক্তরাষ্ট্র অচল হলে খুশি হবেন ট্রাম্প!
Close